স্পোর্টস ডেস্ক:
এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবারও মুখোমুখি হচ্ছে উপমহাদেশের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিকেট দল ভারত ও পাকিস্তান। রবিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় সুপার ফোর পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
এর আগে প্রথম ম্যাচে টানটান উত্তেজনায় ম্যাচ জমিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারত জয় তুলে নিয়েছিল। তবে এই ম্যাচে বেশ কিছু সমীকরণে এসেছে পরিবর্তন।
রাভিন্দ্রা জাদেজার চোট ভারতকে ফেলেছে বিপাকে
ভারতের তিন ফরম্যাটের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার রাভিন্দ্রা জাদেজা এমন এক চোট পেয়েছেন যা তাকে চলমান এশিয়া কাপ তো বটেই সামনের মাসে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল থেকেও ছিটকে দিয়েছে।
এই অলরাউন্ডারের হাঁটুতে অস্ত্রপচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনি এমনই এক অপশন যিনি ব্যাট হাতে ম্যাচ জেতাতে পারেন। উইকেটে দ্রুত গতিতে দৌড়ে রান তুলে নিতে পারেন। প্রয়োজনে বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেন। দুর্দান্ত ফিল্ডার তিনি। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু চমকপ্রদ ক্যাচ নিয়েছেন তিনি যা বহুদিন হাইলাইটসে দেখা যাবে।
তিনি অধিনায়কের ভরসার জায়গা। যখনই উইকেটের প্রয়োজন হয় রাভিন্দ্রা জাদেজা বা হাত ঘুরিয়ে ব্যাটসম্যানকে চাপে ফেলতে পারেন। এমন একজন অলরাউন্ডার না থাকা নিশ্চিতভাবেই ভারতের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়।
জাদেজার বদলে এশিয়া কাপের দলে জায়গা করে নিয়েছেন আকশার প্যাটেল।
জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকিনফোর বিশ্লেষণে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ওয়াসিম জাফর বলেছেন, "জাদেজার অভাব হয়তো পূরণ করা কঠিন হবে কিন্তু আকশার প্যাটেলও দারুণ ফর্মে আছেন।" আকশার সম্প্রতি কয়েকটি সিরিজে ভারতের হয়ে নিয়মিত খেলছেন।
ভারতের পেস বোলিং ইউনিটের দুর্বলতা
জসপ্রিত বুমরাহ ও হারশাল প্যাটেল না থাকায় ভারত এবারে ভুবনেশ্বর কুমারে নেতৃত্বে তরুণ একটি পেস বোলিং ইউনিট নিয়েই খেলতে এসেছিল এশিয়া কাপে।
কিন্তু ভুবনেশ্বরের সাথে আরশদিপ ও আভেশ ঠিক নিজেদের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ফর্ম জাতীয় দলে প্রমাণ করতে পারেননি। তবে এর মধ্যেও পাকিস্তানে ব্যাটসম্যানদের শর্ট বলে দুর্বলতা কাজে লাগিয়েছেন ভারতের পেসাররা।
প্রথম দেখায়, পাকিস্তানের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই শর্ট বল খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হয়েছেন। বোলিংয়েও রাভিন্দ্রা জাদেজাকে মিস করবেন রোহিত শর্মা।
কারণ জাদেজা ও হার্দিক পান্ডিয়ার অলরাউন্ড দক্ষতার কারণে ভারত ছয়জন বোলার নিয়ে নামতে পারে। এটা যে কোনও দলের জন্য বাড়তি শক্তির ব্যাপার।
পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দেখা গিয়েছিল, আভেশ খান বল হাতে ব্যর্থ হওয়ার পর হার্দিক পান্ডিয়া গোটা চার ওভার বল করেন এবং সফল হয়েছিলেন।
এই রকম অপশন থাকলে যে কোনও দলের অধিনায়ক খানিকটা চিন্তামুক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অপরদিকে পাকিস্তানের নাসিম শাহ আছেন দুর্দান্ত ফর্মে, শাহনাওয়াজ দাহানি ইনজুরিতে পড়লেও পাকিস্তানের পেস বোলিং ইউনিট বরাবরের মতোই শক্তিশালী।
ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ এখনও জ্বলে উঠতে পারেনি
২০২২ সালের আগে রোহিত শর্মা যেভাবে ব্যাট করতেন ঠিক সেভাবে হাত খুলে ব্যাট করতে পারছেন না চলতি বছর। তিনি শেষ সেঞ্চুরি করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে।
এই বছর রোহিত শর্মার টি-টোয়েন্টি গড় ২৩ এর মতো। পনের ম্যাচ খেলে মাত্র একটি ফিফটি করেছেন। যদিও ভিরাট কোহলি ১০ ইনিংসে চারটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন, চলতি বছর ছয় ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৭৫ রান। কিন্তু তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১২৪।
পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও তাকে ঠিক নিজের মতো সাবলীল মনে হয়নি, বেশিরভাগ বলই তিনি বুঝে উঠতে পারেননি, ব্যাটের কিনারায় লাগছিল বলগুলো, যদিও তার ৩৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংসটি ভারতের ব্যাটিং লাইন আপে স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছিল।
তবে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় লোকেশ রাহুলের ফর্ম, নাসিম শাহ'র বলে বোল্ড হয়েছেন প্রথম ম্যাচে, দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি হংকং-এর বিপক্ষে ৩৯ বলে ৩৬ রানরে একটি মন্থর ইনিংস খেলেন, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সাথে যায় না।
দুই দলের পাওয়ার হিটারদের খেলা
হংকংয়ের বিপক্ষে সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ ও পাকিস্তানের খুশদিল শাহ প্রমাণ করেছেন সুযোগ পেলে তারা যে কোনও ম্যাচের হাল বদলে দিতে পারেন।
২০২২ সালে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সুরিয়াকুমারের চেয়ে বেশি রান আর কেউ করেননি। প্রায় দুইশোর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন তিনি এই বছর, গড় প্রায় ৪৩।
পাকিস্তানের খুশদিল শাহ হংকংয়ের বিপক্ষে পাঁচটি ছক্কা মেরে দলের রানের চাকায় গতি এনে দিয়েছিলেন। খুশদিল, আসিফ আলি, শাদাব খান- এই ধরনের ব্যাটসম্যানরা যতো বেশি বল খেলতে পারবেন পাকিস্তান ততই বড় স্কোর গড়তে পারবে।
দুই দলের অলরাউন্ডারদের টক্কর
প্রথম ম্যাচের নায়ক হার্দিক পান্ডিয়া প্রমাণ করেছেন কেন তিনি আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রভাবশালী অলরাউন্ডারদের একজন। আজও তার ওপর নজর থাকবে।
ওদিকে সময়ের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার শাদাব খান, ব্যাট হাতেও ভূমিকা রাখতে চাইবেন। তিনি পাকিস্তানের হয়ে ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
আজকের ম্যাচটি হবে দুবাইয়ে, নিশ্চিতভাবেই এই ম্যাচে টসের ভূমিকা থাকবে। এখনও পর্যন্ত টসে জিতে বোলিং নেয়া দলগুলোই ম্যাচে এগিয়ে থাকছে শেষ পর্যন্ত।
এশিয়া কাপের ইতিহাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪ ম্যাচে ৯টিই জিতেছে ভারত। যার মধ্যে শেষ চারটিতেই পরে ব্যাট করে জিতেছে ভারত। বিবিসি
এমআই