ইমরান মাহফুজ:
আমি একাই থাকতেই পছন্দ করি। সারা জীবন একাই থাকছি। অসুস্থ অবস্থায় আমার সঙ্গে অনেকে থাকার আগ্রহ দেখালোও আমি যেখানে আছি, সেখানে অন্য কাউকে থাকার সুযোগ নেই।
কথাগুলো সকালে বলছিলেন হেলাল হাফিজ। বাংলা কবিতার জনপ্রিয় একটি নাম। কেবলমাত্র দুটি বই দিয়ে যিনি জয় করেছেন কোটি পাঠকের মন। একাকীত্বকে সঙ্গী করে কাটিয়ে দিচ্ছেন অব্যক্ত বেদনার জীবন। নানাবিধ অসুখে জর্জরিত জনপ্রিয় কবি এখন প্রায় শয্যাশায়ী। গতাকাল বিকালে বারডেম হাসপাতাল থেকে রাজধানী শাহবাগের একটি হোটেলে আছেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বারডেম হাসপাতালে আনা হয়। গতকাল দুপুরে হাসপাতালের ৮৪১ নম্বর কেবিনে কবিকে দেখতে যান লেখক । যেখানে দেখা যায় কবি ঘিরে আছেন ৪জন। তারা কবির অসুস্থতার খবর পেয়ে আসছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালযয়ের সহকারি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এসেছেন কবির কবিতা নিয়ে গবেষণার একটি পাণ্ডুলিপি নিয়ে।
তিনি জানান, গত ২দিন কবির পাশে আছি। অসুস্থতার কবর শুনে স্থির থাকতে পারিনি। তাকে নিয়ে আমার পাণ্ডুলিপির চূড়ান্ত কপিকে দেখিয়েছি। কবিও চান জীবিত থাকতে তাকে নিয়ে বইটি প্রকাশ পাক।
কবির অসুস্থার বিষয় কী ভাবছেন, জবাবে তিনি বলেন, আমি গতকাল এসেছি। অনেকে আসছেন কবিকে দেখতে। চিকিৎসক জানিয়েছেন তার একজন সার্বক্ষনিক লোক কাছে থাকুক। আজ তাকে রিলিজ দিবে। আমি কবিকে প্রস্তাব দিয়েছি আমার কবি বন্ধু তার কাছে সেবার জন্য থাকতে চায়। কবি জানালেন, হাসপাতাল থেকে হোটেলে গেলে অন্য কাউকে হোটেল কর্তৃপক্ষ এলাউ করবে না।
হেলাল হাফিজ বলেন, হোটেলে আমার পাশে কাউকে হোটেল কর্তৃপক্ষ 'এলাউ' করে না। জরুরি প্রয়োজন হলে নিচ তোলার একজন আসে, আবার চলে যায়। সার্বক্ষনিক কেউ থাকার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন করেছিলাম কবিকে। কেন এইখানে থাকেন? তিনি বলেছিলেন, আমি হোটেল জীবন এনজয় করি। নিঃসঙ্গতা, নির্জনতা আমার ভালো লাগে। একাকীত্বের এই বেদনাকে আমি উপভোগ করি।
আপনার পরিবারের সঙ্গে থাকেন না কেন? তিনি বলেছিলেন- আমার তো পরিবার নেই। আমি একা মানুষ। ছোটবেলায় আমার মা মারা যান। কিছুদিন পর বাবা আবার বিয়ে করেন। দুই ঘর মিলিয়ে আমাদের ৪ ভাই, ৩ বোন। তারা সব সময় আমার খবর রাখে। বোনরা একটু বেশি রাখে।
বাংলা ভাষার জনপ্রিয় এই কবি ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোণায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে তার প্রথম কবিতার বই 'যে জলে আগুন জ্বলে' প্রকাশিত হয়। কবিতার জন্য ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
এমআই