মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল:
বিশ্বব্যপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনকে বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় কর্তৃক নব্বইয়ের দশকে প্রণীত ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজম্যান্ট এ্যাকশন প্লান দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে।
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ এর ২০১০ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিক্স ইনডেক্স অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির দিক থেকে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে প্রথমেই বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ততার বিচারে আন্তর্জাতিক গবেষকরা বাংলাদেশকে পোস্টার চাইল্ড হিসাবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।
আবহমান কাল থেকে ঋতুবৈচিত্রময় ছিল এদেশ। ছয়টি ঋতুতে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান; গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত-শীত-বসন্ত।এই ছয়টি ঋতুর কারণে এদেশকে ষড়ঋতুর দেশও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সরাসরি এদেশে পড়ার কারণে এখন ঋতুবৈচিত্রের প্রভাব অনেকটা বদলে গেছে। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্তর সবদিক দিয়ে সংঘটিত এসকল পরিবর্তন এখন বাংলাদেশে।
বৃষ্টিপাত হ্রাসঃ ভারতীয় উপমহাদেশের কৃষিকাজ বৃষ্টির উপর অনেকটা নির্ভরশীল। ইতিমধ্যেই (২০০৯) বাংলাদেশের উত্তর -পূর্ব অঞ্চলে ধানের ফুল আাসার সময় থেকে বীজ বের হওয়ার মাঝখানের সময়টুকু প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় টি-আমন জাতের ধানের উৎপাদন কমে গেছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, ২০১০ সালে বিগত ১৫ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম বৃষ্টি পাত হয়েছে।
লবণাক্ততা বৃদ্ধি ঃ বর্তমানে দেশের বিপুল এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে গিয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম যশোরে দেখা যায়,সেখানে শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। এ সমস্যা উপকূল অঞ্চল থেকে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও কুমিল্লা পর্য়ন্ত বিস্তৃত হয়েছে এবং আরো উত্তরে বিস্তৃত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত। ১৯৯০ সালে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল ৮৩০০০০ হেক্টর এবং ২০০৯ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৩০৫০০০০ হেক্টর।
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ঃ বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার দেশ হলেও বিগত কয়েক বছরে অস্বাভাবিক ভাবে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে। ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল নথিভুক্ত করা হয় বিগত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.২° সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বাড়বে আবার শীত কালে তাপমাত্রা মারাত্মক ভাবে কমবে। ২০০৩ সালের পর ২০১১ সালে প্রচন্ড শ্বৈতপ্রবাহের কবলে পড়ে বাংলাদেশ। শ্রীমঙ্গলে নথিভুক্ত করা হয় ৬.৪° সেলসিয়াস। পরিবেশ জলবায়ুবিদদের মত,এসময় অনুভূত তাপমাত্রা হয়েছিল আরো কম।
মরুকরণ ঃ ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে।২০০৮ সালে বাংলাদেশে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২৩০০ মিলিলিটার, বরেন্দ্র অঞ্চলের গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১৫০ মিলিমিটার। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গিয়ে খড়ায় আক্রান্ত হবে বিপুল মানুষ। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের মানুষ বেশি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উল্লেখিত কারণগুলো ছাড়াও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস পায়,সুপেয় পানির অভাব দেখা দেয়, জলোচ্ছ্বাস হয়, স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, শিলাবৃষ্টি হয়, অতিবৃষ্টি ও তীব্র বন্য হয় এবং নদীভাঙন সহ আরও অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
এমআই