আশ্রাফুল আলম ভূঁইয়া :
রমজানের প্রথম তারাবিহ বলে কথা। ০৮ঃ২৫ মিনিটের আগেই মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ হল।
অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে সবাই মসজিদে প্রবেশ করলো একে একে।
০৮ঃ৩০ মিনিটে এশার নামাজের জামায়াতের নির্ধারিত সময়সূচি। মসজিদে প্রবেশ করলাম। এশার জামায়াত শুরু হওয়ার ৫-৭ মিনিট আগে থেকেই দেখলাম মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, মোতোয়াল্লি আর হাফেজ সাহেবদের চোখেমুখে হতাশা।
মসজিদ কমিটির লোকজনরাও দেখছি ফিসফিস করছে হাফেজ সাহেবদের সাথে। সবার চোখমুখ অন্ধকার। কি যেনো একটা ঘোষণা দিবে। কিন্তু কেউ দিতে চায়না।
ইমাম সাহেব অনুরোধ করছে হাফেজ সাহেবকে, হাফেজ সাহেব অনুরোধ করছে মসজিদ কমিটিকে!!
অতঃপর এশার নামাজ শুরু হওয়ার ১ মিনিট আগে মোতোয়াল্লি স্পীকার হাতে নিয়ে অনেকটা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো," প্রিয় মুসল্লীগণ ইতিমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ওয়াক্তের নামাজ এমনকি তারাবিহতেও ২০ জনের অধিক মুসল্লী জমায়েত হতে পারবেনা মসজিদে।
আপনারা আজকে যেহেতু সবাই চলে এসেছেন আমাদের খতম তারাবিহ হওয়ার কথা থাকলেও আজ সূরা তারাবিহ দিয়ে নামাজ আদায় করবো আমরা। তবে আগামীকাল থেকে আমাদের যথারীতি খতম তারাবিহ হবে। কিন্তু সবার কাছে অনুরোধ আপনারা দয়া করে বাসায় নামাজ আদায় করবেন,মসজিদে কেউ আসবেননা,আমরা অসহায়"
আহ!! এমন কথাগুলো শোনার সময় বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা জাতির সম্মিলিত কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছে। তাই ছোটবেলা থেকে যে মসজিদমুখী হওয়ার জন্যে উৎসাহিত করতো তারাই বাসায় চলে যেতে বলছে মসজিদ থেকে!!! ধৈর্যের কি এক কঠিন পরীক্ষা।
যাই হোক, সিটিতে একটা ঐতিহ্যবাহী সুবিশাল মসজিদে আজকের তারাবিহর নামাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। আসলে, মসজিদের চেয়েও সুশৃঙ্খল জায়গা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। তাই এখানে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের মত ঘটনা ঘটবেনা এটা নিশ্চিত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাই আবারও আকুল আবেদন করছি, মসজিদ উন্মুক্ত করে দিন। লক্ষ-কোটি ঈমানদার মুসল্লীদের মনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। রমজানের তাৎপর্যপূর্ণ সময়টাতে আমাদের ইবাদত-বন্দেগির মূল জায়গাটাতে সীমাবদ্ধতা তুলে নিন। সারাদিন প্রখর রৌদ্র তাপের আগুনে পুঁড়া মুসাফির যেমন বটগাছের ছায়াই আশ্রয় নিয়ে প্রশান্তি পায় মসজিদ হল গুনাহগার বান্দাদের জন্যে এমনই এক জায়গা। যেখানে আমরা প্রশান্তি খুঁজে পায়। যেখানে আমাদের তৃষ্ণার্ত হৃদয় শীতল হয়।