সময় জার্নাল ডেস্ক: ওয়ান্ডার উইমেন নামটি শুনলেই আমাদের কল্পনায় ভেসে আসে ডিসি কমিকসের এমন একজন নারী চরিত্র, যার মধ্যে সুপারপাওয়ার রয়েছে এবং তার এই শক্তির বলে অসাধ্য জটিলসব কাজ তিনি একাই সাধন করতে পারেন। বাংলাদেশের ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান 'ওয়ান্ডার উইমেন' একজন নারীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে একদল নারী বিভিন্ন পদে কাজ করছেন।
'ওয়ান্ডার উইমেন' এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে বিশ্বাস করা হয় প্রতিটি নারীর মধ্যেই রয়েছে এমন শক্তিশালী ক্ষমতা, যার বলে নারীরা চাইলেই বিশ্বের বুকে অবিরাম বিচরণ করতে পারবে। আর তা বাস্তবায়নে পথপ্রর্দশক হিসেবে কাজ করে যাবে তারা। বিশ্ব যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে আর এই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় যাদের এতো অবদান, তারা কেন এখনো এইদিক থেকে পিছিয়ে থাকবে?
প্রতিষ্ঠানের উদ্যাক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সাবিরা মেহরিন। তিনি নিজেও একজন ভ্রমণ পিপাসু, সেখান থেকেই তার এই চিন্তার উদ্ভব। দীর্ঘ সময় সাবিরা মেহরিন পাহাড়ি অঞ্চলে কাটিয়েছেন। প্রকৃতির কাছাকাছি বড় হওয়াতে ভ্রমণের প্রতি সবসময় তিনি আলাদা টান অনুভব করতেন।
'ওয়ান্ডার উইমেন' ভ্রমণ সংক্রান্ত পরামর্শ, তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি এ পর্যন্ত ২৫০টি ট্যুরের আয়োজন করেছে। এরমধ্যে দেশের বাইরে ১২টি রাষ্ট্রে ভ্রমণ আয়োজন করা হয়, যার বেশিরভাগই ছিল এশিয়া মহাদেশে। মূলত মৌসুমের ওপর ভিত্তি করে ভ্রমণের স্থানসমূহ নির্ধারণ করা হয়। যেমন শীতের সময় পাহাড়ে যাওয়া এবং বর্ষায় ঝর্ণা, লেক ও হাওরের মতো স্থানগুলোতে ট্যুর প্লান করা হয়।
প্রতিটি ট্যুরে ১০-১৪ জন সদস্যের বেশি নেওয়া হয়না। সদস্য সংখ্যার সীমাবদ্ধতা নিয়ে সাবিরা মেহরিন জানান, "অন্যান্য ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে অর্ধশতাধিক মানুষজন নিয়েও ট্যুর আয়োজন করতে দেখা যায়। কিন্তু 'ওয়ান্ডার উইমেন' খুব বেশি সদস্য নিয়ে ট্যুরে না যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে- আমরা সবাইকে সমান গুরুত্ব দিতে চাই। ভ্রমণকারীদের ভ্রমণকে আরামদায়ক করতে তুলতে আমরা সবরকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি। হোটেলে থাকার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া সবকিছুর মান বজায় রাখতে আমরা সচেষ্ট থাকি। তাই সীমিত সংখ্যার সদস্য নিয়ে আমরা আমাদের ট্যুরগুলোর আয়োজন করে থাকি।"
"কম সংখ্যক মানুষ কোথাও গেলে যেরকম খরচ পরে, একত্রে অনেকজন মিলে গেলেও প্রায় একইরকম খরচ পরছে। এক্ষেত্রে সেবার মান নিচে নামলেও ট্রাভেল এজেন্সির লাভের হার টা বেশি থাকে। কিন্তু আমরা মানের দিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি, যার ফলে লাভের দিকটা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরেও আমরা চাই 'ওয়ান্ডার উইমেন' ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশের পাশাপাশি মানুষের আস্থার জায়গায়টাও ধরে রাখুক।"
ভ্রমণের পাশাপাশি 'ওয়ান্ডার উইমেন' নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে 'ওয়ান্ডার ভেঞ্চারস' নামের প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এখানে ৩০০ জনের বেশি নারী উদ্যোক্তা নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়, যেখানে তারা তাদের তৈরি করা পণ্য বিক্রি করেন। এছাড়াও এয়ার টিকেট বুকিং, হোটেল বুকিং, যোগব্যায়াম কর্মশালা, ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট, ট্রেকিং ট্রেনিং ইত্যাদির আয়োজন করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালের অক্টোবরে নারীদের আত্মরক্ষা, সাঁতার ইত্যাদি শেখানোর জন্য ডব্লিউডব্লিউ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে 'ওয়ান্ডার উউমেন'। প্রতিটি ওয়ার্কশপ থেকে ২০-২৫ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সাবিরা মেহরিনের পরিকল্পনা এই অর্থ দিয়ে তিনি 'ওয়ান্ডার উইমেনের' জন্য ওয়েবসাইট নির্মাণ করবেন। বর্তমানে ভ্রমণ সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানতে গ্রাহকরা ফেসবুক পেজটিতে যোগাযোগ করেন। 'ওয়ান্ডার উইমেন' তাদের এই গ্রাহক সেবা ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে, যেন গ্রাহকরা যেকোনো সময় নিজের প্রয়োজনে এখান থেকে তৎক্ষণাৎ তথ্য পেতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে 'ওয়ান্ডার উইমেন' চুক্তিবদ্ধ হয়ে একত্রে কাজ করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যেখান থেকে গ্রাহকরা ট্রাভেল লোনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পাবে।
এবছরের মধ্যে ট্রেকিং ভ্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে 'ওয়ান্ডার উইমেন' গ্রুপটি। নারীরা তাদের জড়তা কাটিয়ে যেন নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে বিশ্বের বুকে ঘুরে বেড়াতে পারে, তা নিশ্চিত করতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে 'ওয়ান্ডার উইমেন'।
সময় জার্নাল/এলআর