সময় জার্নাল ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের ভারত সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের সঙ্গে সাতটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তির বিষয়ে সফরে অগ্রগতি না হলেও এবার সই হয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহারে একটি সমঝোতা। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনোমিক রিসার্চ (এন.বি.ই.আর) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ।
অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ এর মতে প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফর স্ট্রাটেজিকেলি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এই সফরে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক খাতে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে অর্থনৈতিকভাবে আমরা কি পেলাম?
অধ্যাপক পারভেজ বলেন, একধরণের অতি উৎসাহীরা প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরকে অনেক ঘোলা করেছে। আমরা সবাই জানি এজেন্ডাতে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো না। যাদের এক্সপেকটেশন বেশি তাদের বলতে চাই প্রধানমন্ত্রী এবার গিয়েছেন মূলত আমাদের প্রতিরক্ষ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এই দুটো জিনিসের জন্য গিয়েছেন বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী গিয়েছেন বলে সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানত প্রধানমন্ত্রী গিয়েছেন বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতের জন্য ভারতের দেওয়া ঋণচুক্তির ৫০ কোটি ডলার ব্যবহারে প্রকল্পগুলো দ্রুত চূড়ান্তের বিষয়ে এবং তা চূড়ান্ত করতে সম্মত হয়েছেন দুই দেশের শীর্ষ নেতারা। এই প্রকল্পগুলোর আলোকে দুটি দেশ কিভাবে এন্টি টেরিরিজোম ও বর্তমানের জিও পলিটিকেল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। এসব বিষয়ে বিশেষ করে ভারত চিন্তা করে বাংলাদেশ চায়নার দিকে ঝুঁকছে কিনা কারণ ভারত-চায়না সম্পর্ক তো স্থিমিত। আমি বলতে চাই অতিব গুরুত্বপূর্ণ এই সফরকে সাতটি চুক্তিতে বিবেচনা না করে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক দিক থেকে কৌশলগত সফর এটি।
আমরা ভারতকে বেশি দিচ্ছি আর পাচ্ছি কম এবারও তা ঘটবে কিনা
আমরা ভারতকে বেশি দিচ্ছি আর পাচ্ছি কম বলে যে ধারণা চালু আছে এবারের চুক্তির ক্ষেত্রেও ভারত বেশি সুবিধা পাবে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, পূর্বে ভারতের থেকে আমরা ঠকেছি এটা ভারতের দোষ না আমাদের দোষ। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কটা এখন প্রতিবেশি নয় শুধু। ভারতের রিজিওনাল নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ আবার আমাদের বার্মা থেকে যে একটা প্রেশার ও দেশে যাতে টেরোরিজম না হয় সেসব দিক থেকে ভারতকে আমাদের প্রয়োজন। এবং ভারত সে প্রয়োজন মেটাচ্ছে। যদি চায়নাকে আমরা প্রশ্রয় দেই তাহলে ভারতের সেভেন সিস্টার তাদের অর্থনৈতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আমরাই ভারতের আর্টারি যেটা দিয়ে ভারতের অর্থনৈতিক রক্তগুলি সেভেন সিস্টারে প্রভাহিত হয়। ভারত আমাদের কতটুকো দিবে আমি জানিনা তবে আপনারা জানেন ঘোষণা করা হয়েছে নেপাল, ভুটান থেকে বিনামূল্য ভারত ট্রানজিট দিবে। আমরা দুটি আত্মমর্যাদাপূর্ণ স্বাধীন দেশ তাই আমাদের ভারতের সাথে টেবিলে বসেই সবগুলোকে উইন উইন করতে হবে। যেটা আমাদের ব্যুরোক্রেসি সবসময় ফেল করছে যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর জন্য এটা একটি দুঃখের বিষয়। আমি আশা করি সে ব্যাপারে বাংলাদেশের আমলারা তৎপর হবে।
বিনা শুল্কে বাংলাদেশকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব
বাংলাদেশকে শুল্ক ছাড়া ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য মারাক্তক ব্যাপার বলে মনে করেন অধ্যাপক পারভেজ। তিনি বলেন, অপব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের ফরেন এক্সেঞ্জের অবস্থা খারাপ হয়েছে কিন্তু আমারা ভালো আছি। সবচেয়ে ভালো আছে ভারত। আমি অনুরোধ করবো আমাদের আমলাদেরকে ভারতের অর্থনীতি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করতে। করোনাকালে ভারতের অর্থনীতি ভালো আছে তাই ভারত থেকে এরকম সুবিধা আরও নিতে হবে। আমাদের দরকার নেপাল, ভুটান থেকে ট্রানজিট। ভারতের সাথে ট্রানজিটের যে কথা সেটা আমাদের না দিয়ে কি করবে কারণ তারাও আমাদের থেকে ট্রানজিট নিচ্ছে। যদিও আমাদের রাস্তার যে অবস্থা কয়েকটা রাস্তা ছাড়া ভারত বেশি ট্রানজিট সুবিধা নিতে পারবেনা আমাদের দেশ দিয়ে। ভারত আমাদের ওপর ট্রানজিটের ব্যবস্থা করার কারণটা হলো যুদ্ধাবস্থার কারণে। ভারতের জন্য এখন ট্রানজিট গুরুত্বপূর্ণ না হলেও কখনো আঞ্চলিক সমস্যা দেখা দিলে তখন ভারত যেন বাংলাদেশের ট্রানজিট ব্যবহার করতে পারে সে জন্য বাংলাদেশকে বিনা শুল্কে ভারত দিয়ে ট্রানজিটের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই ট্রানজিটের মাধ্যমে আমাদের নেপাল-ভুটান থেকে যতটুকো সম্ভব ট্রেড ট্রানজিট করে নিতে হবে।
সাতটি চুক্তির বাহিরেও তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত হত্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, তিস্তা ভারতের জন্য একটি স্বার্থের বিষয়। এটার পানি বণ্টন ভারতের সব স্টেক হোল্ডারদের বসে ভাগ করতে হবে। ভারতের এই উধারতা আমি নিকট ভবিষ্যাতেও দেখছিনা। সীমান্ত যে হত্যা হচ্ছে এটা নিয়ে এখন আলোচনা বিশ্বব্যাপী হয়ে গেছে এটা অত্যন্ত অন্যায়, মানবতা বিরোধী কিন্তু এটার জন্য আমরা ভারতের সাথে সম্পর্ক খারাপ করবো এটা যারা মনে করে তাহলে তারা দেশদ্রোহী। সীমান্ত হত্যাকে আমি ঘৃণা করি এর প্রতিবাদ জানাই কিন্তু এর জন্য আমরা ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করতে পারিনা।
ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য বিশাল বাজার হয়ে উঠবে বাংলাদেশ
বলা হচ্ছে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য বিশাল বাজার হয়ে উঠবে বাংলাদেশ এব্যাপারে তিনি বলেন, এটা সঠিক। প্রধানমন্ত্রী একটি বড় ব্যবসায় টিম নিয়ে ভারত সফরে গেছেন এটা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করলেও আমি তা করবো না। আমি বলবো ভারতের অর্থনীতি এখন ভালো তাই তাদের বিনিয়োগকারীদের এই সময়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসা উচিৎ।
অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর এইবারের ভারতের সফর অত্যন্ত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। প্রধানমন্ত্রীর যেটা করার ছিলো তিনি তা করে এসেছেন। যা বাংলাদেশের জন্য ফলপ্রসূ হবে।
সময় জার্নাল/এমআই