আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তিস্তা ইস্যুতে ভারতের চর্চিত নীরবতা ঢাকাকে হতাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো সরকারকে আক্রমণ করার একটি ইস্যু পেয়ে যাবে। ভারতের অনলাইন দ্য স্টেটসম্যানের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়- চারদিনের সফরে গত মঙ্গলবার নয়া দিল্লি পৌঁছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সমীকরণ যেভাবে শুরু হয়েছিল, সেটি তার থেকে খুব কমই আশ্বাসদায়ক সূচনা করেছে। ঢাকাকে কি দেয়া হলো তার ওপর নির্ভর করে এই সমীকরণ। মাঝে মাঝে তা যেন রোলার কোস্টারে থাকে না।
উল্লেখযোগ্য বাস্তবতা হলো, তিনি দিল্লিতে অবতরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কমপক্ষে সাতটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তিস্তাকে বাদ রেখে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন। ন্যূনতম বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, অগভীর এই নদীটি প্রবাহিত হয়েছে উত্তরবঙ্গের ভিতর দিয়ে। অন্য সব খাতে ইতিবাচক অগ্রগতির ক্ষেত্রে একে দেখানো হয়েছে সবচেয়ে সমস্যা বা বিতর্কিত ইস্যু হিসেবে।
তিস্তাকে বাদ রেখে আসাম থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা কুশিয়ারা নদী, সীমান্তের এপাড়ে যার সিলেট, তার ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার নিয়ে পানিবণ্টন বিষয়ক সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হয়েছে।
ন্যূনতম হলেও এটা শেখ হাসিনার জন্য বড় বিজয়। কারণ, এটা শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর ইস্যুই নয়। একই সঙ্গে তা বাংলাদেশের ভিতরকার ইস্যুও। তিস্তা নিয়ে একটি চুক্তির জন্য ২০১১ সাল থেকে অপেক্ষায় আছে ঢাকায় আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠোর বিরোধিতার মুখে সেই চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি। দুই দেশের মধ্যে আছে অভিন্ন ৫৪টি নদী। ভৌগোলিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ‘ফ্রেমওয়ার্ক ফর ওয়াটার শেয়ারিং’ বা জলবণ্টনের কাঠামোর বিষয়ে জোর দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। দৃষ্টি দিতে হবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় বাস্তবতার দিকে। ইলিশ কূটনীতি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি করতে পারে। এই সম্পর্ক উন্নত করার প্রতিশ্রুতি বার বার দিয়ে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার দিল্লিতে তিস্তা ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদির কূটনৈতিক নীরবতা যৌক্তিকভাবে ইসলামপন্থি বিরোধীদেরকে প্ররোচিত করবে। তারা এটাকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে আক্রমণ করবে। এমনিতেই তিনি ভারতপন্থি বলে সমালোচনা আছে। এর মধ্য দিয়ে দিল্লি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং বিরোধীদের প্রভাব বাড়িয়েছে। খালেদা জিয়ার বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামিসহ বিরোধী পক্ষগুলো এরই মধ্যে ‘এই সফরকে ব্যর্থ’ বলে অভিহিত করছে। বিরোধী দলগুলোতে আছেন কট্টরপন্থিরাও। উল্লেখ্য, মিলিট্যান্টরা সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশ করে ভারতে। ভারতের প্রতিক্রিয়া দ্বারা দৃশ্যত নির্দেশিত হয়েছে রিয়েলপলিটিক। (ভারতের) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো- এটা হলো আমাদের স্বার্থে যে, তার ভারত সফরকে দেশে সফল হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক শুধু লেনা-দেনার ওপরই ভিত্তি করেই নয়।
যদিও তিস্তা ইস্যুতে ভারতের চর্চিত নীরবতা ঢাকাকে হতাশ করেছে, তবু অর্থনৈতিক ইস্যুতে মোদির প্রতিশ্রুতি আলোচনায় স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। বিশেষ করে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধিতে একটি কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ)-এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। দুই দেশই এক্ষেত্রে গ্রোথ বা প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে একমত হয়েছে। তিস্তা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ায় ঘাটতি থাকলেও, বাণিজ্য নিয়ে প্রস্তাবিত অঙ্গীকার শেখ হাসিনার সফরের জন্য একটি অভিনন্দনযোগ্য অগ্রগতি।
এমআই