স্পোর্টস ডেস্কঃ
পড়াশোনায় মন বসতো না। কীভাবে বসবে? মাথায় যে ছিল ক্রিকেটের পোকা। নাসিম শাহ বই-পত্র ছেড়ে ছুটতেন মাঠে। মজে যেতেন ব্যাট-বলের দুনিয়ায়। এজন্য কতবার যে বাবার হাতে পিটুনি খেতে হয়েছে, ইয়ত্তা নেই। একটি টিভি চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে নাসিমের বাবা বলেন, ‘ক্রিকেট খেলার কারণে আমি নাসিমকে অনেকবার মেরেছি। তাকে বলতাম খেলা ছেড়ে বই ধরো।’ পাকিস্তানের পিছিয়ে থাকা খায়বার পাখতুনখোয়া অঞ্চল থেকে একজন জাতীয় দলে সুযোগ পাবে এমন স্বপ্ন ছিল না নাসিমের পিতার।
বাবার কড়া শাসন এড়িয়েই আজ পাকিস্তান ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত নাসিম। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু ভাইয়ের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেতেন তিনি। নাসিমের বাবা স্বীকার করেছেন, ছেলেকে কোনো সহযোগিতা করেননি তিনি। বলেন, ‘আমাদের কেউই নাসিমকে সমর্থন দেয়নি।
শুধু ওর ভাই তাকে গোপনে টাকা পাঠাতো। যখন নাসিমের মা জীবিত ছিল, নাসিম প্রায়ই বলতো একদিন আমি পাকিস্তানের হয়ে খেলবো। তার কথা শুনে আমরা হাসতাম আর ভাবতাম, দির (পাকিস্তানের খায়বার পাখতুনখোয়ার একটি শহর) থেকে একজন কীভাবে পাকিস্তান দলে সুযোগ পাবে?’
নাসিমের মা বেঁচে নেই। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের আগের দিন মাকে হারান তিনি। নাসিমের বাবা বলেন, ‘‘সে তার মায়ের কথা মনে করে অনেক কাঁদে আর বলে, ‘আজ যদি মা বেঁচে থাকতো পাকিস্তানের জার্সিতে আমাকে দেখে নিশ্চয়ই অনেক খুশি হতো।’’
১০ ক্লাস পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন নাসিম শাহ। তার বাবা চাইতেন ছেলে বিদেশে গিয়ে টাকা ইনকাম করুক। কিন্তু নাসিম তার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। ছিলেন বলেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওভারে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ন্যাশনাল হিরো হতে পেরেছেন। ভুল প্রমাণ করতে পেরেছেন তার বাবাকে। নাসিমের বাবাও এখন ছেলের জন্য প্রাণখুলে দোয়া করেন। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান ম্যাচের সময় আমি তার জন্য দোয়া করেছি। যখন আমরা জিতলাম মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছি। এর আগে আমি আসলে জানতামই না ক্রিকেট কী জিনিস। ব্যাটিং, বোলিং কিছুই বুঝতাম না। যখন থেকে আমার ছেলে পাকিস্তানের হয়ে খেলতে শুরু করে আমি ক্রিকেট বুঝতে থাকি।’
সম্প্রতি নাসিম শাহকে ঘিরে বলিউড অভিনেত্রী উর্বশী রাউতেলার একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এনিয়ে নাসিম শাহর বাবাকেও প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি। কিন্তু সত্য মিথ্যার কিছুই জানি না আমি। এসব ব্যাপার নিয়ে আমার আসলে কোনো ধারণা নেই।’
ছেলেকে কবে বিয়ে করাবেন? নাসিমের বাবা জানালেন, আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে বিয়ের ফুল ফোটার কোনো সম্ভাবনাই নেই তার ছেলের। আপাতত ক্রিকেটেই মনোযোগ দেবেন ১৯ বছর বয়সী এই পেসার।
এমআই