জীবনকাল
দৃপ্ত শেফালির মত ফুটেছি ঊষায়,
গন্ধ শেষে ঝরে যাই প্রভাত বেলায়।
শিশিরের জল লাগা পাপড়ি ডগায়
হলুদ পরাগ রেণু ঘাসের আগায়।
দলে যায় পথচারি পিষে পদতল,
জলকেলি জলচর ভিরু শতদল।
আমি যাই তুমি এলে ভীড় ভরপুর,
কেটে যায় সারাবেলা রৌদ্র দুপুর।
আমি যবে এসেছিনু ধরায় আঁধার,
ভেঙেছি জীবন রণে ব্যাকুল বাঁধার।
কত উৎরাই ফেলে কতনা চড়াই
কত গঞ্জনা দুঃখ আবক্ষে জড়াই।
কতকিছু হতে চাই কত যে স্বপন,
নির্ঘুম তিমিরে করি রাত্রি যাপন।
হলোনা কিছুটি আর সাদামাটা তাই,
আলোক বিহীন দ্বীপ নাই রোশনাই।
ক্ষতি কভু করি নাই এইটুকু জানি,
নিবু নিবু করে জ্বলে, মম দ্বীপখানি।
কারো কাছে চাই নারে আছে দুটি হাত
রিজিক দিবেন তিনি দুই মুঠো ভাত।
ভয় নাই ও মুমিন তিনি দয়াবান,
তার কাছে নত মাথা মহা বলীয়ান।
আজি ধরনীর মাঝে শুরু মহামারী,
হিসাবের হালখাতা পুণ্য শুমারী।
পঙ্গপালের মত আহাজারি আজ,
দোর খুলে যদি আসে কাফনের সাজ।
শেষ যাত্রা গোরমাঝে খাটিয়ার সাথে,
ভরা অমাবস্যার মত আন্ধার রাতে।
যে পড়িবে যখন-তখন এ কবিতাখানি,
খুব দূরে নয় কাছে জানি আমি জানি।
থাকে যদি কানাকড়ি অজ্ঞাত দেনা,
ক্ষমা কর চির বন্ধু যত চেনা-অচেনা।
কপর্দকহীন আমি অই ময়দানে,
কি প্রাপ্তি দুকাধে রয় আল্লাহর শাণে।
রঙিন পৃথিবী যেন থাকে রঙময়,
বিদায় লগ্নে বলি কর কিছু সঞ্চয়।
কেমন থাকি
মনে পড়ে আজ বিদায় লগ্নে কতকাল গেল চলে,
শরীরের মাঝে কত প্রাণ থাকে হৃদয়ের করতলে।
চোখের পাওয়ার কমে গেছে আজ দেখতে পাইনা কিছু
হার্টের ব্যামো গাটে ব্যাথা আজ নিয়েছে আমার পিছু।
হাটুর ব্যারাম, হাপানির বাসা, ভাঙতে পারিনা সিড়ি।
কৈশোর শেষে কৌতুহল বশে ধরেছি তামাক বিড়ি।
কাছের কিছুই দেখতে পাইনা লেন্স লেগেছে চোখে,
শুনেছিস কিছু? কত উপদেশ? দিয়েছিল যা তোকে।
বাইপাস করে এখনো বাচিস, প্রেসার দেড়শ পার,
আরো কিছুদিন বাচতে চাইছি, মুখখানা আজি ভার।
পেটের পীড়ায় কাতর এখন ভাজাপোড়া সব বাদ,
গ্যাস্টিক সাথে আলসার আছে ব্যাথাতুর অবসাদ।
চোখের তারায় আলোক রেখা বিরানির গন্ধ নাকে,
ভোগের দুয়ারে সুগন্ধি ঘ্রাণ আমারেই শুধু ডাকে।
কিছুদূর হাটি আবার জিরিয়ে পৌছেছি গন্তব্যে,
জানতে চায়না শুনতে চায়না নাই কারো ধর্তব্যে।
কিছু চাই দাদু? ঔষধ? খাবার? এত কথা কেন বল?
সমাজের বোঝা আমরা সবাই, স্রোতস্বিনী টলমল।
পাহাড়ের চুড়ায় জন্ম আমার সাগরের মাঝে শেষ,
নীল আকাশে মেঘের গর্জন বৃষ্টি ধোয়ায় কেশ।
কবি পরিচিতি : মুহাম্মদ সামসুজ্জামান ১৯৭১ সালের ২৫ আগস্ট বুধবার সকাল ৯ টায় টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার সেওয়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। বর্তমান কর্মস্থল রাজধানী ধানমন্ডির ‘কাকলি হাই স্কুল এন্ড কলেজ’। এখানে তিনি শিক্ষকতা করেন। সাহিত্যের সাথে নিজেকে অনেক আগেই জড়িয়েছেন। ৯০ এর দশকে কল্পক সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদ এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আমরন সাহিত্য চর্চা করার ইচ্ছা পোষণ করেন।
সময় জার্নাল/ইএইচ