নিজস্ব প্রতিনিধি: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি খলিলুর রহমানকে সাভার থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। ২০১৫ সালে মামলার তদন্তকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। এ সময়ে গ্রেফতার এড়াতে নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন খলিলুর রহমান। এমনকি মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতেন না।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে আত্মগোপনে চলে যান খলিলুর রহমান। এরপর তিনি রাজধানীর দক্ষিণখান, তুরাগ ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। আত্মগোপনে থাকাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন। তিনি একাকী থাকতেন। এমনকি যোগাযোগের জন্য কোনো মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতেন না। কিন্তু মাঝেমধ্যে পরিবারের সদস্যরা গোপনে তার সঙ্গে দেখা করতেন। খলিলুর রহমানের সন্তানরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত অর্থ প্রদান করতেন। মামলার রায় ঘোষণার পর গ্রেফতারের আশঙ্কায় তিনি সাভারে আত্মগোপন করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর ২০১৭ সালের ৯নং মামলার অভিযোগপত্র তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই বছরের ৩০ জানুয়ারি খলিলুর রহমানসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে খলিলুর রহমানের ভাই আজিজুর রহমান, একই এলাকার আলমপুর ইউনিয়নের মৃত তরাব আলীর ছেলে আশক আলী, জানিরগাঁও ইউনিয়নের কদর আলীর ছেলে শাহনেওয়াজ এবং একই এলাকার রমজান আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এরপর পাঁচ আসামির মধ্যে খলিলুর রহমান ছাড়া অন্যদের কারাগারে পাঠানো হয়। তবে বিচারকালীন বিভিন্ন সময় চার আসামি মৃত্যুবরণ করেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের চারটিতে মৃত্যুদণ্ড ও একটিতে ১০ বছরের সাজা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে খলিলুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার খলিলুর রহমান ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ছিলেন। যুদ্ধের সময় তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরে চন্ডিগড় ইউনিয়নের আল বদর বাহিনীর কমান্ডার হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা থানা এলাকায় অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করা, ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যায় জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে ২২ জনকে হত্যা, একজনকে ধর্ষণ, একজনকে ধর্ষণের চেষ্টা, অপহৃত চারজনের মধ্যে দুজনকে ক্যাম্পে নির্যাতন, ১৪-১৫টি বাড়িতে লুটপাট ও ৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ রয়েছে বলে জানায় র্যাব। গ্রেফতার খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
সময় জার্নাল/এলআর