মোঃ তুহিন হোসাইনঃ
কাদের খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলো। সূর্য ওঠার আগেই সে রোজ ঘুম থেকে উঠে। রাত দশটা বাজার আগেই তার রীতিমতো পনের থেকে বিশ টা হাই তোলা হয়ে যায়। চোখ ভারী হয়ে আসে তখন বসেই ঝিমাতে থাকে। সারাদিনের পরিশ্রমের ভার সে আর বইতে পারেনা। তাই অগত্যা শুয়ে পড়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই রাজ্যের ঘুম তার শরীরকে গ্রাস করে। হাজারো স্বপ্ন তার চোখে পরিবারের বোঝা তার কাধে। রোজ ভোরে যখন ঘুম ভেঙে যায় তখনই তার পথ চলা শুরু হয়।
বাড়িতে কাদেরের তেমন কোন কাজ নেই। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য সে বের হয় ভোরেই। প্রতিদিনের ন্যায় আজও হাতমুখ ধুয়ে কিছু মুখে না দিয়েই সে রাস্তায় বের হয়ে পড়লো। এখনো আধো আলো আধো আঁধারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে চারপাশ। ঠান্ডা মৃদু বাতাসে গাছের পাতা নড়ছে। কাদের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে। চটি জোড়ার বেহাল অবস্থা একেবারে চিলতে পড়ে গেছে। পায়ের তলায় পিচের ঘোসায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এখন আর নতুন চটি না কিনলেই নয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হচ্ছে। ল্যাম্পপোষ্টের বাতিগুলো নিভিয়ে দেয়া হয়েছে অনেক আগেই।
কাদের রাস্তার দুধারে লাগানো পোষ্টার দেখতে দেখতে এগোচ্ছে। হয়তো কোন বিজ্ঞাপন চোখে পড়বে। রাস্তায় ঝাড়ুর কাজ শুরু হয়েছে। হর্ন বাজাতে বাজাতে করপোরেশন থেকে আবর্জনা বহনের গাড়ি ধেঁয়ে আসছে । একদল কাক মহাসমারোহে রাস্তায় জটলা হওয়া উচ্ছিষ্ট খেয়ে দিনযাপন করছে বহুদিন থেকেই। করপোরেশনের গাড়ির এই হর্ন তাদের পূর্ব পরিচিত। শব্দ শুনেই ভয়ার্ত ভাবে দিকবিদিক উড়তে থাকে। উচ্ছিষ্ট হারাবার ভয়ে তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়না। হাজার ভালো করে পরিষ্কার করলেও দিনশেষে রাস্তায় ঠিকই আবার উচ্ছিষ্টের সৃষ্টি হবে। কিন্তু কাদেরদের পথচলা আর শেষ হয়না। শুধুই বৃদ্ধি পেতে থাকে চটির ফুঁটো। বিজ্ঞাপনের পোষ্টার চোখে না পড়লেও নতুন চটি কেনার স্বপ্ন তার দুচোখ ঘিরে থাকে।
এমআই