নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে ঘুমধুম-উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় ফের গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপিত গোলার বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে সীমান্তের এপারও। ফলে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে ফের আতংক বিরাজ করছে।
গতরাত ৩টা থেকে নাইক্ষংছড়ির ঘুমধুম ও উখিয়ার পালংখালি সীমান্ত এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু হয়। একই সময়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায়ও হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানান।
এদিকে সোমবার দুপুরে সীমান্তের রেজুপাড়া বিওপি এলাকা পরিদর্শনে আসছেন বিজিবি মহাপরিচালক। এর মাঝে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ফের গোলাবর্ষণ শুরু হওয়ায় এপারে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই বিজিবির।
হোয়াইক্যং ২ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে জবত আলী (৪০) বলেন, মিয়ানমারের ওপারে হোয়াইক্যং সীমান্তের কাছাকাছি হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া ভারী গোলার শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। ওঠে দেখি প্রচণ্ড শব্দ আর হেলিকপ্টার থেকে ভারি গোলা ফেলার দৃশ্য। আতংকে মাছ শিকারে যেতে পারিনি। ওপারে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে।
কাঞ্জরপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন (৪৫) বলেন, হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপারে চলমান ঘটনা আমাদের নতুন করে শংকিত করেছে। সপ্তাহ দশদিন আগেও ওপারে গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে। কিন্তু নতুন করে গত রাত ৩টা থেকে সোমবার (১০ অক্টোবর) সকাল ৬টা পর্যন্ত থেমে থেমে হেলিকপ্টার থেকে বর্ষণ করা গোলার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ার বলেন, সীমান্তের ওপারে সীমান্তের কাছে নতুন করে থেমে থেমে গোলাবর্ষণের ঘটনায় হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এপারের সীমান্তবাসীর মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। তবে ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সর্তক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পাশের পালংখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের সঙ্গে মিয়ানমারের স্থল সীমান্ত অনেক দূর। সীমান্তের কয়েক জায়গায় গুলির শব্দ পেয়েছেন বলে সীমান্তের লোকজন জানিয়েছে।
ঘুমধুম জিরো পয়েন্টের রোহিঙ্গা আবুল কালাম (৩৬) বলেন, সীমান্তের ওপারে ফের গোলাগুলির আওয়াজে আবারও ঘুম হারাম অবস্থা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ও আরকান আর্মি সঙ্গে চলমান সংঘাতে মংডুর মোলভী বাজার, পুর্মা, চাকমা পাড়া, বালুখালি, কুমরখালি, চামবনা এলাকায় প্রচণ্ড গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সেনারা অভিযানের নামে বর্বরতা শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গা ঢল বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। ওই সময় ৭-৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও ৩-৪ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ১২ লাখের বেশি। গত পাঁচ বছরে সোয়া লাখের বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্প গুলোতে। ফলে তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর গত দুমাস ধরে সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেদেশের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত চলছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ গোলাগুলির পর সোমবার আবারও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
সময় জার্নাল/এলআর