শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ক্ষুব্ধ হয়ে লালমনিরহাট ত্যাগ করলেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতারা
রোববার(০৯ অক্টোবর) সকাল ৭টায় ক্ষুব্ধ হয়ে লালমনিরহাট সার্কিট হাউস ত্যাগ করেন তারা।
এর আগে শনিবার(৮ অক্টোবর) রাতভর চেষ্টা করেও আদিতমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের নতুন কমিটি ঘোষনা করতে ব্যর্থ হন তারা। এক পর্যয়ে লাঠি চার্জ করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সার্কিট হাউস থেকে বের করে দেয় পুলিশ।
জানা গেছে, দীর্ঘ ১০ বছর পরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনের আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামীলীগ। আদিতমারী জিএস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে শনিবার(৮ অক্টোবর) বিকেলে সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। যার একটি গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি। অপর গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক সিরাজুল হক। দুই গ্রুপে একাধিক সভাপতি সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন।
অন্তদ্বন্দ্বের কারনে সংঘাত এড়াতে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সম্মেলন মাঠে ১১৪ জন পৃুলিশ সদস্যের পাশাপাশি ৩জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও সম্মেলনের আগের রাতে টহলে ছিল র্যাব এবং সম্মেলন মাঠ ড্রোন ও সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রিত ছিল।
বিকেল ৪টায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি(ভারপ্রাপ্ত) রবিউল ইসলাম মানিকের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন এমপি।
এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, কেন্দ্রীয় সদস্য হোসনে আরা ডালিয়া, সফুরা বেগম রুমী, কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, সহ সভাপতি সিরাজুল হক।
সমাজকল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ গ্রুপে সভাপতি পদ প্রত্যাশী ছিলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদকের আস্থাভাজন সাবেক উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি ভেলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, সাবেক উপজেলা আ'লীগের সম্পাদক আজিজুল ইসলাম প্রধান, উপজেলা আ'লীগের সভাপতি(ভার) রবিউল ইসলাম মানিক আর সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক রফিকুল আলম, সমাজকল্যান মন্ত্রীর এপিএস মিজানুর রহমান মিজান।
অপর গ্রুপে সভাপতি পদ প্রত্যাশী ছিলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সেলিম হায়দার ও সাবেক সভাপতি প্রায়ত শওকত আলীর ভাজিতা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস আর সম্পাদক ছিলেন, জেলা আ'লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ সামসুল ইসলাম সুরুজের ছেলে রাবি ছাত্রলীগ নেতা কমলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতী।
টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথমার্ধ শেষ করে দ্বিতীয় অধিবেশনে ৩ ঘন্টা প্রার্থীদের সাথে কথা বলে সমঝোতায় পৌছতে ব্যর্থ হন কেন্দ্রীয় নেতারা।অবশেষে লালমনিরহাট সার্কিট হাউসে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষনার আশ্বাস দিয়ে সম্মেলন স্থল ত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
সার্কিট হাউসে রাতভর আলোচনা শেষে ভোর ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি এবং মাহমুদ ওমর চিশতীকে সাধারন সম্পাদক করে দুই গ্রুপকে দু'টি পদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষনা করেন। এতে সমাজকল্যান মন্ত্রী গ্রুপের হেবি ওয়েটের রফিকুল আলমের সম্পাদক পদ চলে গেলে হট্রোগোল শুরু হয়। রফিকুল আলম এ কমিটি মানি না বলে স্লোগান দিলে প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান নিজে রফিকুল আলম ও তার সমর্থকদের ধাক্কা দিয়ে সার্কিট হাউসের দ্বিতীয় তলা থেকে নামিয়ে দেন। এতে হট্রোগোল শুরু হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের ঘোষিত কমিটিতে অনুমোদন দিতে জেলা কমিটিকে নির্দেশ দেন। কিন্তু জেলা কমিটি তা অমান্য করে অনুমোদন না দিয়েই সার্কিট হাউস ত্যাগ করেন। কেন্দ্রীয় নেতারা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে রোববার সকাল ৭ টায় লালমনিরহাট ত্যাগ করেন।
কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘোষিত কমিটির বিষয়টি অস্বীকার করে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, সমঝোতায় পৌছানো সম্ভব হয়নি বলে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।
এমআই