নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আগামী ১৫ অক্টোবর তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়া। তার এ সফরে দেশটির সঙ্গে একটি চুক্তি ও দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে চায় বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) ব্রুনাইয়ের সুলতানের সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এটি ব্রুনাইয়ের রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের প্রথম সফর হবে। সুলতানের এ রাষ্ট্রীয় সফরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকসমূহ স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-দ্বি-পাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তি, বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগ সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, দুই দেশ কর্তৃক নাবিকদের সার্টিফিকেটেরে স্বীকৃতি সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।
ব্রুনাইয়ের সুলতানের প্রথম বাংলাদেশ সফর সফল ও ফলপ্রসূ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মোমেন। তিনি বলেন, বিগত এক দশকে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ নানাবিধ ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হচ্ছে। ব্রুনাইয়ের ভিশন-২০৩৫ এর আওতায় গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে অর্থনীতির বহুমুখীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, স্বাস্থ্য সেবা ও জ্বালানি ইত্যাদি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী।
ব্রুনাইয়ের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে মোমেন বলেন, ব্রুনাইয়ের সঙ্গেও জ্বালানি নিয়ে আলোচনা করছি। আমাদের ভালো আলোচনা হচ্ছে।
হালাল খাবার নিয়ে ব্রুনাই আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক গরু ও ছাগল রয়েছে। বিশেষ করে ব্রুনাইয়ের সুলতান আমাদের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস খুব পছন্দ করেন। হালাল মাংস রপ্তানি করা যায় কি না, তারা (ব্রুনাই) সে বিষয়েও জানতে চেয়েছেন। এটি নিয়ে আলোচনা করছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি সম্পদে সমৃদ্ধ উচ্চ আয়ের দেশ ব্রুনাইয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা স্থাপনের মধ্যে দিয়ে দু’দেশই লাভবান হতে পারে। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা, মাদক ও মানব পাচার, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাংলাদেশ এবং ব্রুনাই এক ও অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকে। জাতিসংঘ, ওআইসি, এআরএফ, কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক ফোরামে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে।
সুলতানের সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার সুযোগ হবে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী এবং সুলতানের মধ্যে অধিকতর মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও এ সফর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সংগঠন আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনার হওয়ার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব সহকারে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
গার্ড অব অনার পাবেন ব্রুনাইয়ের সুলতান
আগামী ১৫ অক্টোবর ব্রুনাইয়ের সুলতানকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে তাকে ২১ বার তোপধ্বনিসহ গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এরপর সুলতান সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। একই দিন ব্রুনাইয়ের সূলতান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে তার সম্মানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন সুলতান।
সফরের দ্বিতীয় দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন। ১৭ অক্টোবর দেশে ফিরে যাবেন ব্রুনাইয়ের সুলতান।
এমআই