মুকতাদির রশিদ রোমিও : অনেকে মিচকি, কেউ আবার দাঁত চেপে না তো তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। আর যাই হোক সাংবাদিক তো নাজেহাল হয়েছে। বাড়তি মজা। আপনাদের তৃপ্তির ঢেঁকুর সাথে যোগ হবে, এক বোতল "ডাল"। সাংবাদিক যখন, তাহলে "ডাল" খেতে পারে। সবাইকে যখন হাইকোর্ট এর নির্দেশনা অমান্য করে মিডিয়া সামনে বেইজ্জতি করে সেখানে এ আর কিসের সাংবাদিক।
প্রথমেই বলে নেই, মফস্বলের সাংবাদিকদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধটা বাড়তি। আমরা যখন কথিত এসি রুমের ঢাকাই সাংবাদিক এর তার সাথে সেল্ফি মেরে প্রভাবশালী হই সেখানে মফস্বলের সাংবাদিকদের বড় অংশই ব্যস্ত সংগ্রামী জীবনে।
তাহলে আসুন আসল কথায়। গেল বৃহস্পতিবার রাত ন'টার পর দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে আটক করে বিজিবি সদস্যরা। তারা ভদ্রলোক যার মটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন প্রথমে তার পুরো মোটরসাইকেল চেক করেন। ভদ্রলোক তার সাথে থাকা শফিকুল ইসলাম সোহাগকে বিজিবির চেক করার ভিডিও ধারন করতে অনুরোধ করায় তর্ক শুরু হয়। সাংবাদিক শাহীনকে তারা লালমনিরহাটের কুলাঘাট সীমান্তবর্তী বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে কয়েক ঘন্টা নির্যাতন করে এবং তার সামনে ভারতীয় এক বোতল ফেন্সডিলসহ ছবি তুলে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তিনি আদিতমারী মহিষখোঁচা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক।
মজার ব্যাপার হলো যিনি মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন অর্থাৎ জনাব সোহাগ তাকে তার মোটরসাইকেলের জন্য আটক না করে ধরা হচ্ছে সাংবাদিককে যিনি মুলত চড়ে ছিলেন।
সাংবাদিক শাহীন আমাকে বলছেন, তিনি তার অসুস্থ সহকর্মীকে ৯ টার কিছু আগে রংপুর হাসপাতালে পাঠিয়ে নিজের জন্যে কিছু টাকা তুলতে কাছেই একটি এটিএম বুথের উদ্দেশ্য সোহাগকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রতিমধ্যে তারা বিজিবির চেকপোস্ট অতিক্রম করেন এবং সেখানেই ঘটনার সুত্রপাত।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবির পরিচালক তৌহিদুল আলম জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই সাংবাদিক শাহীন সদর উপজেলার কুলাঘাট সীমান্তবর্তী এলাকায় আসা যাওয়া করতেন। বৃহস্পতিবার রাতে কুলাঘাট এলে তাকে সন্দেহ করে আটক করা হয়। ওই সময় বিজিবির টহলরত সদস্যদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে শাহিনের ব্যবহারিত মোটরসাইকেলটি তল্লাশি চালিয়ে ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করে। পরে তাকে আটক করে সদর থানায় সোপর্দ করে।
পরিচালক আরো জানান, এর আগে দুইবার মোঘলহাট ক্যাম্পে আটক হয়েছিল। পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
সীমান্তের এ অতন্দ্র প্রহরীর কথা শুনলে আপনার বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে। কিন্তু যে কারনে আমার হয়নি তার কারন হলো--
১৫ বিজিবির পরিচালক তৌহিদুল আলম বলছেন ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যরাতের পর ১২ঃ৩০ থেকে ১টার মধ্যে। কিন্তু সোহাগের বর্ণনা এটা ন'টার একটু পরের ঘটনা। তিন ঘন্টা প্রতিষ্ঠানিক নির্যাতনের জন্যে যথেষ্ট সময়।
জনাব সোহাগের বর্ননা তাকে বিজিবি মেরে বের করে দিতে চাইলে তিনি যাবেন না বলে জানান। তিনি আমাকে বলেছেন, "আমি বারবার বলি আমাদের দুজনকেই আটক রাখেন। আর পরে যখন দেখি তারা ফেন্সিডিলসহ তাকে ছবি তুলে মামলা দিচ্ছে তখন আমিই বলি আমার বাইক আমাকে না মামলা করে তাকে করছেন কেন? "
বিজিবি অভিযোগ সম্পর্কে, সাংবাদিক শাহীন আমাকে বলেছেন, এর আগে তিনি ভাঙনে শিকার সীমান্ত পিলারের ছবি তুলতে গিয়ে বিজিবি তার প্রতি রাগান্বিত হন। তার কাছ থেকে মুচলেকা নেন যে, বিজিবি তার কোন সমস্যা করেননি। অবশ্য নদীর ভাঙনের শিকার সীমান্ত পিলারে রাজনৈতিক ভাবে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিশ্চিত আপনারা ফেনী নদীর ঘটনায় জানেন।
এরপরে? সীমন্তের এ অতন্দ্র প্রহরীরা থাকতে এই যে ভারতীয় গরু ঢুকছে তা নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেন সাংবাদিক শাহীন। তার যুক্তি গরুর জন্যেই সীমান্ত হত্যা।
এরপর থেকেই, সাংবাদিকের অভিযোগ হাবিলদার আনোয়ার তাঁকে বিভিন্ন উপায়ে অপমান করেন। এমনকি কিছুদিন আগে রাস্তার উপর তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। বিজিবির অধিনায়ককে জানানোর পর হাবিলদার আনোয়ার আরো রেখে যান। তারপরই ঘটলো এমন ঘটনা।
অনেকের মনে হতে পারে রোমিও আপনি বেশি সংবেদনশীল হবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, না আমি দেখছি হাতে অস্ত্র থাকলে নিরীহ পাখির দিকে তাক করতে কতটাই না মজা। তবু্ও ধন্যবাদ শুক্রবার বিকেল ৩টায় সাংবাদিক শাহীনকে অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আফাজ উদ্দিনের আদালতে ভার্চুয়ালি হাজির করা হলে আদালত তার জামিন মন্জুর করেন।
জানবেন, যারা চেতনার যুক্তিতে ভিন্নমতের প্রতি আক্রমণে উল্লাসিত ছিলেন তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন "পাগলা ঘোড়া কই থেকে কই নিয়ে যায়"।
লেখক : সাংবাদিক