সায়ফা বিনতে হারেসঃ
গ্রাজুয়েশন শেষ করে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য এক বিশেষ দিন 'সমাবর্তন'। সমাবর্তনের নাম শুনলেই চোখে ভেসে উঠে গাউন, ক্যাপ পরে এক ফালি হাসি দিয়ে বন্ধু, বাবা-মার সাথে ছবি তোলার দৃশ্য টি। শুধু ছবিই নয়, এ যেন এক ই বছরের অন্য ডিপার্টমেন্ট,কলেজের বন্ধুদের এক ই ছাতার নীচে সমবেত হওয়ার এক দারুণ সুযোগ। সারাজীবনের এক অর্জন যেন এই দিনটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের এই দিনটি আজীবন স্মৃতির পাতায় থাকে।
আগামী ১৯ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজন করতে যাচ্ছে ৫৩ তম সমাবর্তন। যাতে অংশ নিতে যাচ্ছে ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ১৩৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝে ১২৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটরা এই সমাবর্তনে এক ই ভ্যেনুতে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ও সেশনজট নিরাসনে রাজধানীর ঢাকা কলেজ,ইডেন মহিলা কলেজ,শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ,কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ,মিরপুর বাংলা কলেজ,সরকারি তিতুমীর কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক সমাবর্তনে অধিভুক্ত ঢাকা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজের জন্য ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস এবং ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের জন্য ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। গতবার প্রজেক্টরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম সরাসরি সম্প্রচার হয় এই দুই ভেন্যুতে। যাকে ডিজিটাল সমাবর্তন নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। যেখানে থাকবে না কোন বিশেষ আয়োজন। সরাসরি অনুষ্ঠানের একাংশ হতে না পারায় সাত কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থীর মাঝে একটা অপূর্ণতা কাজ করছে। তাছাড়া এই প্রোগ্রামে আমাদের ৭ কলেজ গুলোর জন্য নেই কোন সম্মাননা কিংবা পুরষ্কারের আয়োজন। যার ফলে ভালো রেজাল্ট করার পর ও তেমন কোন স্বীকৃতি পাচ্ছেন না সাত কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। শুধুমাত্র সার্টিফিকেট উত্তোলন আর গাউন ক্যাপ পরে ছবি তোলার জন্য নিজ ক্যাম্পাসেই সমমানের ফি তে ডিজিটাল সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করে পর্দায় তাকিয়ে অনুষ্ঠান দেখা অনেক শিক্ষার্থীর কাছে প্রহসনমূলক বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি অনেক টা এমন হয়ে যাচ্ছে যে,বাসায় বসে টিভিতে সমাবর্তন দেখা আর কলেজে গিয়ে প্রজেক্টরে প্রোগ্রাম দেখা প্রায় এক ই কথা। নামমাত্র এই সমাবর্তনে অংশগ্রহণে তাই অনিচ্ছুক এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ৭ কলেজের অনেক শিক্ষার্থীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সমাবর্তন কে বয়কটের ঘোষণা দিতে ও দেখা গেছে ।
দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য অধিভুক্ত শিক্ষার্থীদের যতটুকু সম্মান এই অনুষ্ঠানে দেওয়া হয়, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের তা দেওয়া হয় না। বাকি গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তনের দিন চ্যান্সেলর, বিশেষ অতিথিদের কাছ থেকে মূল্যবান বক্তৃতা সরাসরি শোনার পাশাপাশি,বিশেষ বিশেষ ক্যাটাগরিতে মেডেল ও পেয়ে থাকে। এ ধরনের কোন সুযোগ ই থাকছে না সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। ঢাবি অধিভুক্ত অন্যান্য কলেজ যেখানে এক ই ভেন্যুতে সরাসরি সমাবর্তনে যোগ দিতে পারছে, সেখানে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি এটা অবিচারের ই শামিল । এক ই রেজিষ্ট্রেশন ফি তে কেউ সরাসরি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারছে আর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পাপেট হয়ে বসে নিজ নিজ কলেজে ডিজিটাল প্রজেক্টে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে এটা কতটা যুক্তিযুক্ত আমার তা জানা নেই!
সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন নানা বিষয় সামনে রেখে বার বার আন্দোলন করেছে সাত কলেজ অধিভুক্তি বাতিলের। তেমনি সমাবর্তনের মতন এমন অনেক ক্ষেত্রেই নিজস্ব স্বকীয়তা না থাকায়,সেশন জট,ফলাফল বিপর্যয় সহ আরো নানাবিধ বৈষম্যমূলক আচরণের স্বীকার হওয়ায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও বেশ কয়েকবার সাত কলেজ অধিভুক্তি বাতিলের জন্য আন্দোলন করেছে।
সাত কলেজের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে,আমার মতে সাত কলেজের দুটো ভ্যেনুতেও বিশেষ কিছু প্রোগ্রাম, বিশেষ অতিথির উপস্থিতি, যথাযত সম্মাননার আয়োজন করলে এতো স্টুডেন্টরা আরো ভালো করার জন্য অনুপ্রেরণা পাবে। সর্বোপরি সাত কলেজের ই শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে বলে আমি মনে করি।
লেখকঃ
শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ,
ইডেন মহিলা কলেজ,ঢাকা