বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউ চালু একটি অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত

শনিবার, এপ্রিল ১৭, ২০২১
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউ চালু একটি অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত

বিশেষ প্রতিবেদন :

খুলনায় প্রথমবারের মতো উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চালু করা হয়েছে। সম্প্রতি খুলনার রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের কাছে আইসিইউ ইউনিটটি হস্তান্তর করা হয়। আর দাকোপ হাসপাতালের ইউনিটে অক্সিজেন সরবরাহ অংশটি চালু করা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই আরও সাতটি উপজেলায় আইসিইউ চালু হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, আইসিইউ ( ICU-Intensive Care Unit ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। এটি আসলে একটি বিশেষায়িত ইউনিট। অ্যানেসথেসিয়া বিষয়ের যে পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো আইসিইউ। আমাদের শরীরে অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করে, যেমন—কিডনি, লিভার, হার্ট, ফুসফুস, মস্তিষ্ক। এদের সবকয়টি গুরুত্বপূর্ণ অংগ।এর মধ্যে হার্ট ও ফুসফুসের তুলনা হয় না। এর মধ্যে কিডনি, লিভারও রয়েছে। কোনো কারণে যদি এই অঙ্গগুলো বিকল হয়ে যায়, কাজ করতে না পারে, তখন বিশেষ যন্ত্রের সহযোগিতায় আমরা ওই অঙ্গগুলো সচল করতে পারি। সচল করার জন্য ওই রোগীদের সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা সম্ভব নয়। তখন তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। 


আইসিইউ একটি বিশেষায়িত সেবা। খুবই সংকটাপন্ন রোগীকে আইসিইউতে রেফার করা হয়। যখন কারো হার্ট,ফুসফুস, কিডনি,লিভার ফাংশন কমে যায় তখনি তাকে আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেফার করা হয়। আইসিইউ-তে সেবা দেয়ার জন্য ডেডিকেটেড টিম ওয়ার্ক লাগে। বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ২৪ ঘন্টা সার্ভিস দিতে হয়। কেননা সংকটাপন্ন রোগীর জীবন বাঁচাতে প্রতিটি মুহূর্ত খুবই মূল্যবান। 


আমাদের দেশের জনগণের অসচেতনতায়, স্বাস্থ্য বিধি মেনে না চলায় করোনা অতিমারির দ্বিতীয় দফায় হঠাৎ করে সংক্রমণের হার বেড়ে যায়, রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং মৃত্যুর সংখ্যাও প্রতিদিনই আগের দিনের রেকর্ড ভাংগছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কোন সিট খালি নেই, আইসিইউ এর সিট পাওয়া তো অকল্পনীয়। শুধুমাত্র তখনই সিট পাওয়া যায় যখন কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় কিংবা মারা যায়। আইসিইউ সংকট উত্তরণের জন্য এবং উপজেলা পর্যায়ে করোনার চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউ ইউনিট চালু করা হচ্ছে। 


খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চালু করছেন তিনি। ইতোমধ্যে দুটি উপজেলায় আইসিইউ স্থাপন এবং অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছে। চলতি মাসে আরও সাতটি উপজেলায় আইসিইউ চালু হবে। 


আইসিইউ কোন ছেলেখেলা নয়। এমবিবিএস পাশ করার পর আরও ৫/৭ বছর পড়াশুনা/ ট্রেনিং করে আইসিইউ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা অর্জন করা যায়। এক ভেন্টিলেটর মেশিনের রেট, প্রেসার, ভলিউম, হিউমিডিটি - এসব ঠিকমত সেটা আপ করতে না পারলে ফুসফুসের বারোটা বেজে যায়। কোভিড-১৯ আর ফুসফুসের যা ক্ষতি করবে, এই মেশিন তার চেয়ে বড় ক্ষতি করে দিতে পারে ঠিকমত না চালালে। এর বাইরেও রয়েছে সিভিপি লাইন, আর্টারিয়াল লাইন, টিউব থোরাকোস্টমি, ইন্টিউবেশন সহ আরও অনেক জীবনরক্ষাকারী এবং জরুরী কঠিন বিষয়। যেসব হাসপাতালে প্রায় সব বিষয়ের বিভাগ ও বিশেষজ্ঞ আছে সেখানেই কেবল আইসিইউ চালানো সম্ভব। 


উপজেলা লেভেলে কোনভাবেই আইসিইউ চালানোর মত অবস্থা নেই। সেখানকার ডাক্তাররাও একেবারেই নবীন। ১০/ ১৫ দিন বা ১ মাসের ট্রেনিং দিয়ে এনে আইসিইউ চালানো সম্ভব না।  

উপজেলায় আইসিউ স্থাপন করতে যে টাকা খরচ হচ্ছে, সেই টাকা দিয়ে মেডিকেল কলেজ লেভেলে বা  জেলা লেভেলে (অবশ্যই যথেষ্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকতে হবে) আইসিইউ সমৃদ্ধ করা শ্রেয়তর। তাহলে সত্যিকার অর্থেই তা মানুষের কাজে লাগবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই, জরুরি বিভাগে সেবা দেয়ার জন্য ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের পোস্ট নেই, জুনিয়র কনসালট্যান্ট পোস্টগুলো ও অনেক সময় ফাঁকা থাকে। যেখানে অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ল্যাব ফ্যাসিলিটি নেই,ল্যাব টেকনিশিয়ান নেই, সেখানে আইসিইউ তে ভর্তি রোগীর জরুরি পরীক্ষানিরীক্ষা (CRP, S.Ferritin,D-Dimer, LDH, S.Creatinine, S.Electrolytes) কোথায় হবে? সাধারণ সর্দি, কাশির রোগির চিকিৎসা দিতে আইসিইউ লাগেনা! আইসিইউ তো আর জেনারেল সেবা নয়, আইসিইউ একটি বিশেষায়িত সেবা।বিশেষায়িত সেবা দিতে একটি প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম প্রয়োজন, যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্ভব নয়। অদূর ভবিষ্যতে এই আইসিইউগুলো গলার ফাস হয়ে দেখা দিবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। অচল পরে থেকে নষ্ট হবে, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হবে।

সময় জার্নাল/ইএইচ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল