ডাঃ আহমেদ জোবায়ের :
গতবছরের ঘটনাটি আমাকে চরম ভাবে ভাবনার গভীরে ডুবিয়ে দিয়েছে।
একজন ৮০ বছর বয়স্কা মৃতপ্রায় রুগী যিনি ব্রেন স্ট্রোক করে ২৭দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন আমার মেডিকেয়ার সেন্টারে, যার বেঁচে থাকার ক্ষীণ আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন তার আত্মীয় পরিজন আপনজনরা। তাকে একদিন ছুটি দিলাম।
২৭ দিন ধরে রুগীটাকে আমি দেখে গেছি, চিকিৎসা দিয়েছি,যত্ন নিয়েছি।
একটা চ্যালেঞ্জিং জব ছিলো আমার কাছে।
আমি একজন সেল্ফ এম্পলয়েড চিকিৎসক।
এত দীর্ঘ দিন কোন রুগীকে চিকিৎসা দেবার রেকর্ড আমার ছিলো না।
২৭ দিনে রুগীটার শারীরিক অবস্থার নানা পথ আমি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করেছি।
আমার পেশাগত জীবনের অন্যতম সফলতা ও স্মৃতি হয়ে থাকবেন এই রুগী।
অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠার পর বাড়িতে নিয়ে সেবা ও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়ে বিদায় দিলাম সেই রুগীকে।
রুগীর ছেলেরা বললেন, বাড়িতে নিয়ে সেবা করার মত লোক উনাদের নেই।
রুগীর তিন ছেলের একজন ফ্রান্সে থাকে। বাকি দুইজন বাড়িতে থাকে। তারা অবিবাহিত।
তাই রুগীর ছেলেরা সিওমেক হাসপাতালে আরো কিছুদিন উনাকে রেখে চিকিৎসা করতে চাইলেন।
রুগীকে নিয়ে সিলেট রওয়ানা হলো তারা এম্বুলেন্সে।
আমার মেডিকেয়ার সেন্টার থেকে ১৬ কিমি দূরের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় গিয়ে এম্বুলেন্সটি এক্সিডেন্ট করে একজন জলজ্যান্ত মানুষকে স্পট ডেথ করে বসে।
সেদিন রাতে খবরটি যখন শুনি, আমি হতবিহবল হয়ে পড়ি।।
যিনি এক্সিডেন্টে মারা গেলেন উনার জন্য আমার হৃদয় ভারী হয়ে উঠলো।
আমি শুধু ভাবছি যিনি বেঁচে থাকারই আশা ছিলো না, তিনি দিব্যি আছেন অথচ যিনি মরে যাবার কোন শঙ্কাই ছিলো না। তিনি আকস্মিক এক্সিডেন্টে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন।
কিসের এই দুনিয়া।কিছের পিছু ছুটছি আমরা।
মরীচিকার মায়ায় আমরা ভাবিনা এক সেকেন্ড পরেই আমি মানুষ থেকে লাশে পরিনত হতে পারি।
মরে যাওয়াই কি সব শেষ।
না সেটা তো অনন্তকালের জীবনের শুরু মাত্র।
আজ এই পৃথিবী আপনার আমার অহংকারে বিমর্ষ হয়ে আছে।
ক্ষমতার দাপটে আমরা ধরা কে সরা জ্ঞান করছি।
সৃষ্টির সেরা মানুষকে মানুষ ই ভাবিনা আজ।
চুরি,ডাকাতি, দূর্নীতি, লুটপাট, ঠকবাজি, ধান্ধাবাজি, প্রতারণা, মজুতদারীতে আমাদের জুড়ি নেই।
প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মরণ নেশায় বুঁধ আমরা।
যে যেভাবে সুযোগ পাচ্ছি, টাকার পিছু ছুটছি নিরন্তর।
ভাবুন এক মিনিট আগেও সেই লোকটি ভাবেনি এক মিনিট পরেই তিনি নিথর হয়ে যাবেন।
হয়তবা বাড়িতে তার ছোট্ট একটা মেয়ে আছে,মেয়ের বায়না ছিলো বাবা আমার জন্য একটা পুতুল নিয়ে আসবে।
হয়তবা প্রিয়তমা স্ত্রী সেদিন দুপুরে রান্না করে অপেক্ষা করছিলেন প্রিয়তম স্বামী এসে খাবেন বলে।
এক মিনিট আগেও যেই লোকটির ভাবনা জুড়ে ছিলো দুনিয়া।কিন্ত চোখের পলকেই সেই দুনিয়া চির অন্ধকারে পরিনত হয়ে গেলো তার।
ভাবুন। গভীর ভাবে ভাবুন।
মানুষের ক্ষতি করবেন না। ঠকাবেন না মানুষ কে।
অন্যের বিপদের অন্যায্য কারণ হবেন না।
সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিবেন না।
অযথা মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করবেন না।
মানুষের বিপদকে আপনার টাকা ইনকামের মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিবেন না।
আপনার দল না করলেও, আপনার রাজনৈতিক মতের অনুসারী না হলেও অন্যের ক্ষতি করবেন না।
আপনি আজ যেই ক্ষমতার মোহে চোখে রঙ্গিন চশমা পরে আছেন, কাল তিনি মহাপরাক্রমশালী।
আপনার রঙ্গিন দুনিয়াকে অন্ধকার করে দিতে এক সেকেন্ডও লাগবে না।।
ভালো থাকুক মানুষ।
পৃথিবী হয়ে উঠুক জাগ্রত বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষের।