শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে দুইজন কর্মকর্তা থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরা। মুখ থুবড়ে পড়েছে কার্যক্রম।
জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহম্মেদ যোগদানের পর থেকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয় সরকারী সেবাদানকারী এ প্রতিষ্ঠানটি। তার নানান অনীয়ম, দুর্নীতি আর ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী ও সাধারন রোগীরা গনপিটিশন দায়ের করেন। যার প্রক্ষিতে ২/৩ মাস আগে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডা. তৌফিক আহম্মেদকে বদলি করেন কর্তৃপক্ষ। টাকা আর ক্ষমতার জোরে সেই বদলির আদেশ বাতিল করে সপদে বহাল থাকেন তিনি।
বদলির আদেশ ঠেকানোর পরে তার অনীয়ম ও দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে আবারও ফুসে উঠে ভুক্তভোগী সাধারন রোগীরা। আবারও স্বাস্থ্য মন্ত্রীসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন দফতরে লিখিত গনপিটিশন দায়ের করেন। ডা. তৌফিকের আচরনে কর্মস্থলে কর্মপরিবেশ নেই দাবি করে গণবদলির আবেদন করেন হাসপাতালের ৭জন কর্মচারী।
ফলে হাসপাতালে কর্মরতদের মাঝে প্রকাশ্যে দুইটি গ্রুপ তৈরী হয়। এতে সেবার মান চরম ভাবে ব্যাহত হলে ভোগান্তিতে পড়ে সেবা গ্রহীতারা। ফলে আবারও ফুসে উঠে স্থানীয়রা ও সাধারন রোগীরা। ঘুষখোর এ চিকিৎসক ডা.তৌফিকের অপসরন দাবি করে হাসপাতাল গেটে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। এতে টনক নড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও অধিদফতরের নির্দেশে হাসপাতালের চলমান ঘটনার তদন্তে নামেন সিভিল সার্জন ডা নির্মলেন্দু রায়। তদন্ত শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন পাঠান তিনি। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে হাসপাতালের কর্মচারী গ্রুপের দুইজনকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
একই সাথে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.তৌফিক আহম্মেদকে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পদে বদলি করে ২৮ সেপ্টেম্বর পত্র পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। বদলির আদেশে ২ অক্টোবরের মধ্য দায়িত্ব বুঝে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। অন্যথায় ৩ অক্টোবর থেকে তিনি স্বেচ্ছায় নতুন কর্মস্থলে যাবেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পক্ষে পরিচালক(প্রশাসন) অধ্যাপক ডা.শফিউল ইসলাম স্বাক্ষরীত এ আদেশ মুলে গত ২ অক্টোবর আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে যোগদান করে ডা. খালিদ হোসেন। যোগদানের ১৪ দিনেও দায়িত্ব বুঝে দেননি ডা. তৌফিক আহম্মেদ। ফলে নতুন পুরাতন মিলে দুইজন কর্মকর্তাই রয়েছেন একটি পদে। দু'জনেই আদেশও দিচ্ছে অধিনস্থদের। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। ফলে সেবার মানও চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে তৈরী হয়েছে ভুতরে পরিবেশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন, নতুন স্যার এলেও তাকে চেয়ারে বসতে দেয়নি পুরাতন স্যার। নতুন স্যার ওই রুমের সোফায় বসে থেকে বাসায় যান। তার আদেশ ফলো করলে পুরাতন স্যার বকা দেন। আমরা পড়েছি চরম বিপাকে। আপাত কয়েকদিন থেকে আদেশ বাতিলের তদবির করতে অফিসের বাহিরে রয়েছেন পুরাতন স্যার। তবে তার কয়েকজন অনুচরের হুমকীতে নতুন স্যার চেয়ারে বসেন না।
তবে যোগদানকৃত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালিদ হোসেন বলেন, ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ২ অক্টোবর যোগদান করেছি ঠিকই তবে দায়িত্ব বুঝে দেয়নি। ১০ দিন সময় চেয়েছেন। সেই সময় অতিবাহিত হলেও দায়িত্ব বুঝে দিচ্ছেন না। তিনি(পুরাতন) যেহেতু দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছেন তাই অধিনস্থরা তার নির্দেশের বাহিরে যাচ্ছে না। চাকুরী জীবনের শেষ দিকে এসে বিতর্কে যেতে চাই না। সেবা প্রদানে সমস্যা হলেও সে নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডা. খালিদ হোসেন যোগদান করেছেন। তার যোগদানপত্র গ্রহন করা হয়েছে। তিনিই ওই পদের কর্মকর্তা।
এমআই