মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ
সাতক্ষীরায় বিপুল পরিমান ভেজাল দুধ ও জেলিসহ আটকের পর ভ্রাম্যমান আদালতে ছয়মাসের কারাদন্ডপ্রাপ্ত দুগ্ধ উৎপাদনকারি সমবায় সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি তালার প্রশান্ত কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে আদালতকে প্রতারণা করে জামিন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করে ধার্য দিনের আগেই তিনি বৃহষ্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে অন্তঃবর্তীকালিন জামিন নিয়েছেন।
দুগ্ধ ব্যবসায়ি প্রশান্ত ঘোষ সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেয়ালা নলতা গ্রামের কালিপদ ঘোষের ছেলে। ভেজাল দুধ ও জেলিসহ আটকের ঘটনায় ভ্রাম্যমান আদালতে ছয়মাসের কারাদন্ড প্রদানের পাশাপাশি তাকে পাঁচ
লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সাতক্ষীরার পরিচালক নাজমুল হাসান ও তালা উপজেলার স্যানিটারী ইনসপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক শরিফ মোঃ আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে গত ৬ সেপ্টেম্বর দুগ্ধ উৎপাদনকারি সমবায় সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি ও মিল্ক ভিটা সমবায় সমিতির তালা উপজেলা শাখার সভাপতি প্রশান্ত কুমার ঘোষের বাড়িতে এক অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় তার বাড়ি থেকে ২৫০ কেজি জেলি ও প্রতি ক্যানে ৪০ কেজি করে ১১২০ কেজি ভেজাল দুধভর্তি ২৮টি ক্যানসহ প্রশান্ত ঘোষকে আটক করা হয়। অভিযানকালে জেলা স্যানিটারী
ইনসপেক্টর রথীন্দ্রনাথ সরকার, জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান, তালা থানার উপপরিদর্শক মনির উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে পাটকেলঘাটা সহকারি ভূমি কমিশনার (ভূমি)মোঃ রুহুল কুদ্দুসের সামনে হাজির করা হলে প্রশান্ত ঘোষ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারান্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে, আরো ছয় মাসের কারাদন্ডাদেশ দেওয়া হয়। মামলা নং-১২/২২।
সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে, ভ্রাম্যমান আদালতের ১২/২২ নং মামলার বিরুদ্ধে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২) এর সেরেস্তার আইনজীবী অ্যাড. অনিত কুমার মুখার্জী তার মোয়াক্কেল প্রশান্ত ঘোষের পক্ষে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ আদালতে ১৭/২২ নং আপিল মামলা করেন।
গত ২ অক্টোবর আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে নথি তলবের জন্য ১৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ১৩ অক্টোবর বিচারক মোঃ রেজা রশিদ আসামী প্রশান্ত কুমার ঘোষকে পরবর্তী ধার্য দিন ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে অন্তঃবর্তীকালিন জামিন দেন। এদিকে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের জামিন বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে একই সেরেস্তার আইনজীবী অ্যাড. আলমগীর আলম বাপ্পি গত
১২ অক্টোবর ১২৮৯ নং মিস কেস দাখিল করেন। আদালত শুনানীর জন্য আগামি ১৭ অক্টোবর সোমবার দিন ধার্য করেন।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. প্রবীর কুমার মুখার্জী বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের একটি জামিন বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিস কেস করে শুনানীর জন্য ধার্য দিনের বিষয়টি গোপন রেখে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জামিন নেওয়া আদালত প্রতারণার শামিল। আইন অনুযায়ি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জামিন শুনানীর আগেই মিস কেসের আবেদন প্রত্যাহার করতে হবে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসামী প্রশান্ত ঘোষের পক্ষে ওকালতনামায় সাক্ষরকারি আইনজীবী যথাক্রমে অ্যাড. অনিত কুমার মুখার্জী ও অ্যাড. আলমগীর আলম বাপ্পি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে গত বৃহষ্পতিবার প্রশান্ত ঘোষের জামিন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিসকেস শুনানীর দিনে আবেদন প্রত্যাহার করা হবে।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ বলেন, বিষয়টি সোমবার ১৭ অক্টোবর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিসকেস শুনানীকালে উপস্থাপন করা হবে।
এমআই