এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট প্রতিনিধি:
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে চিংড়াখালী ইউনিয়ন সাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির জনবল সংকটে একমাত্র ভরসা হয়ে দারিয়েছে নিরাপত্তা প্রহরী। স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামীণ এ জনপদের হাজার হাজার মানুষ। সরকারিভাবে জনগনের দ্বারপ্রান্তে স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দেওয়ার জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ হলেও নেই কোন ডাক্তার, সপ্তাহে একদিন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা আসলেও, একাধিক পদ রয়েছে বছরের পর বছর ধরে শূন্য।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক কেন্দ্রে নাম সর্বস্ব দু-একজন থাকলেও তারা আবার তদবীর করে বদলী হয়ে চলে যাচ্ছে অন্যত্র। নিজেদের পছন্দের জায়গায় ডেপুটেশনে রয়েছে অনেকে। স্থানীয়দের দাবি জনবল সমস্যা সমাধান করে কেন্দ্রগুলো সচল করে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার।
সরেজমিনে দেখা গেছে চিংড়াখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি বৃহস্পতিবার সাড়ে ১২টায় প্রতিটি কক্ষে ঝুলছে তালা। মিরাজুল ইসলাম নামে একজন নিরাপত্তা প্রহরী (এমএলএসএস) দায়িত্বে রয়েছেন। চিকিৎসা নিতে আসা চিংড়াখালী গ্রামের বাবুল শেখ, কুদ্দুস হাওলাদার, আবুল শিকদারসহ একাধিকরা ডাক্তার না পেয়ে বাক বিতান্ডা করে ফিরে যাচ্ছেন।
সকলের অভিযোগ এভাবে কতদিন চলতে থাকবে সরকার দিচ্ছেন আর আমরা পাচ্ছিনা। এগুলো দেখার কি কেউ নেই? কেন্দ্রটির জমিদাতার ছেলে মো. আসাদুজ্জামান বক্স ক্ষোভের সাতে বলেন, বিগত ৪-৫ বছর ধরে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নেই। একজন মাত্র পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা রয়েছে। তাও সপ্তাহে একদিন আসেন। ঘন্টা দুই থেকে চলে যান। আয়া পদে একজন থাকলেও তিনি আসেন ওইদিনই পরিদর্শিকার সাথে। বাবা জমি দিয়ে কি ভুল করেছেন? সরকার অনেক টাকা ব্যায়ে ভবন করে দিয়েছে অথচ কেন্দ্রটি থেকে সপ্তাহে একদিন ২-৩ ঘন্টা সময়ের জন্য পাচ্ছে সেবা। ইউনিয়নের দুর-দুরান্তের বিভিন্ন গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন নিরাপত্তকর্মীর সাথে। একাধিকবার উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জানিয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি। এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিত্র একই।
বহরবুনিয়া ইউনিয়নের সাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নিজস্ব কোন ভবন নেই। অস্থায়ী ভিত্তিতে বসছে ইউনিয়ন পরিষদের ২টি কক্ষে। ৩ বছর ধরে নেই উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, ফাতেমা খানম পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা ও আয়া আলেয়া আক্তার ৪ বছর ধরে ডেপুটেশনে রয়েছেন জেলা শহরে। শুধুমাত্র একজন নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন। জিউধরা সাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৬ মাস ধরে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ছুটিতে থেকে সদ্য অবসর নিয়েছেন। অতিরিক্ত দায়িত্বে পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা একজন থাকলেও সপ্তাহে যাচ্ছেন দুদিন। নিয়মিত এখানে শুধুমাত্র একজন এম.এল.এস.এস রয়েছেন। হোগলাপাশা ইউনিয়েনে প্রায় ৩ বছর ধরে মেডিকেল অফিসার ও এফ ডব্লিউভি পদটি শূন্য রয়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্বে একজন মেডিকেল অফিসার সপ্তাহে অফিস করছেন দু-একদিন। নিশানবাড়িয়ায় মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে ৫ বছর এফডবিøউভি পদ শূন্য রয়েছে প্রায় ২ বছর, আয়া ও এম.এল.এস.এস পদও শূন্য দীর্ঘদিন। পঞ্চকরন ইউনিয়নে মেডিকেল অফিসার পদে ৪ বছর ধরে এ পদটি শূন্য, এফডব্লিউভি নেই ১ বছর। অতিরিক্ত দায়িত্বে সপ্তাহে একজন গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। আয়া পদে শওকত আরা ৪ বছর ধরে ডেপুটেশনে জেলা শহরে, এম.এল.এস.এস পদে নেই কোন লোক। বনগ্রামে এফডবিøউভি নেই ৪ মাস ধরে, মেডিকেল অফিসারের রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে।
চিংড়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলী আক্কাস বুলু বলেন, তার ইউনিয়নের পরিবার কল্যান কেন্দ্রটির এ দৈর্ন্যদশা একাধিকবার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা মাসিক সভায়ও বিষয়টি নিয়ে তোলা হয়েছে। এখনও হয়নি সুরাহা।
এ সম্পর্কে বাগেরহাট জেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারি পরিচালক ও উপজেলার দায়িত্বরত (অ.দা) কর্মকর্তা ডাঃ দিলদার হোসেন বলেন, জনবল সংকট থাকার কারনে এ উপজেলার বিভিন্ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। তবে, নিয়োগ জটিলতার অবসান হলেই এ সমস্যা থাকবেনা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিবার কল্যান কেন্দ্রেগুলোর সমস্যার বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরকে অবহিত করা হবে। গ্রামীন জনপদের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে নজরদারীও বাড়ানো হবে।
এমআই