নিজস্ব প্রতিবেদক:
২২ অক্টোবর সন্ধায় (শনিবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ), বাংলাদেশে চলমান ইতিহাসচর্চার সংকট ও সৈয়দ আবুল মকসুদ-এর সাধনা' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ সলিমুল্লাহ খান। আলোচক হিসেবে ছিলেন গবেষক আলতাফ পারভেজ ও লেখক কাজল রশীদ শাহীন। তার কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন আলমগীর ইসলাম শান্ত। সঞ্চালনা করেন ইমরান মাহফুজ। সমাপনী বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। স্বাগত জানান সৈয়দ নাফিস মকসুদ।
প্রধান আলোচক হিসেবে সলিমুল্লাহ খান, সৈয়দ আবুল মকসুদের মতো অজাত মানুষকে নিয়েও সমালোচনায় আক্রান্ত হতে হয়েছে। তবু তিনি তার কাজ থামাননি। মাথা ঠান্ডা রাখতেন, এই জন্য অনেক কাজ করে যেতে পেরেছেন। বিশেষ করে তিনি মওলানা ভাসানী নিয়ে গবেষণা করে আমাদের অনেক উপকার করেছেন। এইভাবে তার সামগ্রিক জীবন যাপন আমাদের সমাজকে এগিয়ে যেতে অসামান্য দরদী ভূমিকা রেখেছে। তার জন্ম আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। তার চিন্তা ছড়িয়ে দিতে সবাইকে কাজ করতে হবে।
আলোচক কাজল রশীদ শাহীন বলেন, আবুল মকসুদ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবন ভেবেছেন, লিখেছেন, লড়াই করে গেছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ধরে আমাদের জাতীর নিজস্বতা খুজেছেন। একই সাথে সব সময় ইতিহাস ঐতিহ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সংকট খুঁজে প্রশ্ন তুলেছেন। সমাধানের অন্বেষণ করেছেন আমৃত্যু। ইতিহাসের সত্যকে ধরার চেষ্টা করেছেন আবুল মকসুদ।
আলতাফ পারভেজ বলেন, আবুল মকসুদ আগে মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছেন। বাংলাদেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন থাকলে ইতিহাস চর্চার সংকট। তিনি থাকলে তার কাজের ক্ষেত্রে সহজ হতো না। এইভাবে দিন দিন আমরা অন্ধকার একটা সময়ে এগুচ্ছে।
উল্লেখ্য সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম।
সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতিমান ছিলেন। ১৯৮১ সালে তার কবিতার বই বিকেলবেলা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা প্রকাশিত হয়। মানবাধিকার, পরিবেশ, সমাজ ও প্রেম নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন।
আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে তিনি লিখেছেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর জীবন, কর্মকাণ্ড, রাজনীতি ও দর্শন (১৯৮৬) ও ভাসানী কাহিনী (২০১৩)। ভাসানী কাহিনীতে তিনি ভাসানীর বৈচিত্র্যময় ও ঘটনাবহুল দীর্ঘ জীবন এবং তার রাজনৈতিক দর্শন বর্ণনা করেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য (২০১১) ও স্মৃতিতে ওয়ালীউল্লাহ (২০১৪)। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য গ্রন্থে তিনি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে লিখেছেন। এ ছাড়া, তৎকালীন সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিকগুলো তুলে ধরেছেন।
এমআই