রুহুল সরকার, রাজীবপুর : বসন্ত কালে মাঠে সড়কের ধারে অনাদরে থাকা যে ফুলগুলো সহজেই দৃষ্টি কেড়ে নেয় তার মধ্যে একটি হলো বনজুঁই বা ঘেটু ফুল। তবে ‘ভাট ফুল’ নামেই এর পরিচিত বেশি।
ভাট ফুল বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম Hill glory flower বৈজ্ঞানিক নাম Clerodendrum Inerme। এটি Verbenaceac পরিবারের অন্তর্গত।
ভাট ফুল ক্ষুদ্রাকৃতির ঝোপ জাতীয় ফুলগাছ। এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশে। বাংলাদেশের মাটিতে কোন পরিচর্যা ছাড়াই এই ফুলের গাছ অত্যন্ত অনাদর আর অবহেলায় জন্মে এবং বেড়ে ওঠে।গ্রামের শিশুদের খেলার উপকরণ হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় ভাট ফুল।
গাছ গুল্ম জাতীয় ছোট আকৃতির ও বেশ ঝোপালো হয়। সবুজ বহুপত্রী ভাট গাছের ফুল ধবধবে সাদা। ফুল ফোঁটে থোকায় থোকায়। দেশের সর্বত্রই দেখা যায় এই ফুল গাছ। তবে ভাওয়াল গড় ও মধুপুর গড় এলাকায় ভাট গাছ প্রচুর জন্মায় এবং ফুলে ফুলে একেবারে ছেয়ে থাকে। ভাট ফুলের পাপড়ি পাঁচটি এবং পাপড়ির গোড়ার দিকটা সামান্য হালকা বেগুনি রঙের। প্রতি ফুলে চারটি করে পুংকেশর সামনের দিকে বেরিয়ে আসে। পুংকেশরের অগ্রভাগ হয় স্ফীত ও কালো। রাতের বেল বেশ গন্ধ ছড়ায় এই ফুল।
রাজীবপুর সরকারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ক শিক্ষক শহিদুর রহমান বলেন, ভাট ফুল গ্রামের মানুষদের কাছে অতিপরিচিত। বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার এ ফুলের আদিনিবাস। ভাট গাছের প্রধান কান্ড সোজাভাবে দন্ডায়মান, সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। দেখতে কিছুটা পান পাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ির রঙ সাদা এবং এতে বেগুনি রং এর মিশেল আছে। সাধারণত মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এ ফুল গ্রামের মেঠো পথের দু’ধারে ফুটে থাকতে দেখা যায়। এ ফুল থেকে রাতে বেশ মিষ্টি সৌরভ ছড়ায়।
তিনি আরও জানান শরীরে বিষাক্ত কিছু কামড় দিলে ভাট ফুল রস করে ঐ স্থানে দিলে দ্রুত ব্যাথা কমে এবং বিষক্রিয়া হয় না। অনেকে আবার পেটের কৃমি দূর করার জন্য এ ফুলের রস খেয়ে থাকেন। গৃহপালিত গরু ছাগলের শরীরে উকুন হলে ভাট গাছের পাতা বেটে দুই থেকে তিনদিন লাগালে উকুন মরে যায়। চর্ম রোগেও এর রস উপকারী বলে জানান তিনি।
সময় জার্নাল/এমআই