মাহবুবুল হক খান, দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮০ আসন কমানোর প্রতিবাদ ও পূর্বের আসন পূর্ণবহালসহ ৩ দফা দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে দিনাজপুরের সচেতন ছাত্র-শিক্ষক-অভিবাবকবৃন্দ। ৩ দফা দাবীর মধ্যে রয়েছে এক-অবিলম্বে আসন সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্বের আসন (২০০৫টি আসন) অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো উন্নত সমৃদ্ধ ও সম্প্রসারিত করা, দুই-অবিলম্বে পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া এবং শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা এবং তিন-সকল অনুষদে যুগোপযোগী ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করে পর্যাপ্ত গবেষণার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা, শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করে পর্যাপ্ত গবেষণার আয়োজন নিশ্চিত করা।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর-২০২২) সকাল ১১টায় নিমতলাস্থ দিনাজপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ দাবী জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাসেল শাহীন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মাঝে শীর্ষস্থানীয় এবং বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন এই বিদ্যাপীঠে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বের ইতিহাস তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পূর্বের কৃষি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০০১ সালের ৮ জুলাই হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ করা হয়। ২০০২ সালের ৮ এপ্রিল মহামান্য রাষ্ট্র্রপতির প্রজ্ঞাপন জাতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয় এবং ১৬ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর ২০১৫ সালে এখানে বিজ্ঞান অনুষদ খোলা হয়। দীর্ঘ ২২ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয় যে সুনাম অর্জন করেছে এবং যতটুকু অগ্রগতি ঘটেছিল তাকে আজ সংকুচিত করা হচ্ছে। এখানে প্রতিবছর ২০০৫ জন শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পেতো। কিন্তু ২০২১ সালে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে প্রথম বর্ষে ২০০৫টি আসন থেকে কমিয়ে ১৬৮৫ তে নামিয়ে আনা হয়। ফলে ৩২০ জন শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়। যার মধ্যে শুধু বিজ্ঞান বিভাগেই ১৫৫টি আসন কমিয়ে দেয়া হয় এবং এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসনে কোন রকম পদক্ষেপ গ্রহণ না করে এ বছর ২০২২ সালে পুনরায় স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের আসন ১৬৮৫ থেকে কমিয়ে ১৫২৫টি করা হয় অর্থাৎ এবছরেও ১৬০ জন শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। যার মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদেই আসন কমানো হয়েছে ৯৩টি। এভাবে বছর বছর আসন সংখ্যা কমানো দেশে উচ্চ শিক্ষার দাঁড় সংকুচিত করা, দেশে উচ্চশিক্ষিত দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি অনুষদের অধীন ২৩টি স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি এবং পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট অনুষদের অধীন ৩২ টি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। প্রতি সেমিস্টার ২১ সপ্তাহে সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও কোন কোন ক্ষেত্রে তা সমাপ্ত হতে ৩৬ থেকে ৪০ সপ্তাহ লেগে যায়। এখানে ইংরেজি মাধ্যমে ক্লাস ও পরীক্ষা সম্পন্ন করার পাশাপাশি বাস্তব জ্ঞান অর্জনের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর যে শিক্ষা সফর হওয়ার কথা সেগুলোও নিয়মিত হয় না। আবার বিভিন্ন বিষয়ে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষনার পর্যাপ্ত উদ্যোগ ও আয়োজন নেই। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যে জ্ঞানার্জন ও গবেষনা পরিচালনা করবেন তার বিষয়ভিত্তিক আয়োজনের ঘাটতি রয়েছে।
সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে কোন যুক্তিতে আসনসংখ্যা কমানো হলো তা দেশবাসিকে দ্রুত জানানোর দাবী জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে দ্রুত ৩ দফা বাস্তবায়নের দাবী জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এএসএম মনিরুজ্জামান, মকিদ হায়দার শিপন, লিটন রায় দাস, রতন রায়, আনোয়ার হোসেন, শিক্ষার্থী তনিমা আজিজ, আসতারুল আলম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
সময় জার্নাল/এলআর