নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ (২৪) হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। ফাঁদে ফেলে তাকে হত্যা করা হতে পারে অথবা ভাড়াটে খুনিরা হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে তার বান্ধবী বুশরাকে কেন্দ্র করে প্রথমে তদন্ত চলে। তবে এরপর আরও কিছু বিষয় তদন্তকারীদের সামনে আসে।
এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে বর্তমানে শত্রুতাবশত, ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে স্পেনে যাওয়াকে কেন্দ্র করে হত্যা, রাজনৈতিক বিদ্বেষ ও প্রেমঘটিত কারণসহ আরও কিছু বিষয় সামনে এনে তদন্ত চলছে। এছাড়া পেশাদার মাদক কারবারিদের হাতে ফারদিন খুন হতে পারেন এমন সন্দেহও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। প্রযুক্তিগত তদন্ত ও সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।
মরদেহ উদ্ধারের চারদিন পার হলেও এখনো ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু নতুন বিষয় সামনে আসায় সেগুলো নিয়ে ‘ক্লু’ উদ্ঘাটনে কাজ চলছে। ফলে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রহস্য উন্মোচনে সময় লাগছে।
এদিকে, মাদকের সঙ্গে ফারদিনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নতুন করে আলোচনা হচ্ছে। তবে বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে তার পরিবারের দাবি, ফারদিন মাদকের সঙ্গে কখনোই সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি খুবই মেধাবী ছিলেন। ফারদিন ধনীর দুলাল নন, ফলে তাকে স্ট্রাগল করে বড় হতে হয়েছে। তার বাবার উপার্জন খুব বেশি নয়। এ অবস্থায় নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাতে কোচিং ও টিউশনি করতেন ফারদিন। সেই টাকা থেকে ছোট দুই ভাইয়েরও খরচ দিতেন তিনি।
ফারদিনের পরিবারের দাবি, বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীকে মাদক সংগ্রহ করতে হলে অত দূর যেতে হয়? ঢাকা মেডিকেল এলাকায় কোন জিনিস পাওয়া যায় না? পরদিন যে ছেলের পরীক্ষা সে কীভাবে মাদক আনতে এতদূর যাবে?
ফারদিন বুয়েটের হলেও থাকতেন না। বাসায় থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
এদিকে, র্যাবের সঙ্গে ‘গোলাগুলিতে’ চিহ্নিত মাদক কারবারি ‘সিটি শাহীন’ নিহতের ঘটনার সঙ্গে ফারদিন হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে র্যাব। র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, শাহীন চিহ্নিত মাদক কারবারি। তাকে দীর্ঘদিন ধরে খোঁজা হচ্ছিল।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ‘সিটি শাহীনের’ অবস্থান নিশ্চিত হয়ে র্যাব-১ বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চনপাড়া বস্তিতে অভিযান চালায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সিটি শাহীন ও তার ১০/১২ জন সঙ্গী (অস্ত্রধারী দল) র্যাবকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে র্যাব পাল্টা গুলি ছুড়লে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন শাহীন। পরে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে তিনি মারা যান।
ফারদিনের চাচা আবু ইউসুফ বলেন, ফারদিন মাদকের সঙ্গে কখনোই সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি খুবই মেধাবী ছিলেন এবং স্ট্রাগল করেই তাকে বড় হতে হয়েছে। কোচিং-টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি ছোট দুই ভাইয়েরও খরচ দিতেন ফারদিন।
তিনি বলেন, পারিবারিকভাবে ফারদিনের কোনো শত্রু ছিল না। ফারদিনের স্কুল, কলেজ ও বুয়েটের কারও সঙ্গে কখনো শত্রুতা ছিল না। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরা এখনো পুরোপুরি অন্ধকারে আছি। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন ধৈর্য ধরেন।
সময় জার্নাল/এলআর