সময় জার্নাল ডেস্ক:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে প্রথমবারের মতো কনস্যুলার সংলাপে বসছে বাংলাদেশ। বুধবার (১৬ নভেম্বর) আবুধাবিতে এ সংলাপটি হতে যাচ্ছে। সংলাপে দেশটিতে বন্দি বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানো সহজীকরণ, কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধা, বিশেষ করে দেশটিতে গিয়ে কাজ না পাওয়া, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং অর্থপাচার সংক্রান্ত ইস্যুতে তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতার বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসবে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আমিরাতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে কনস্যুলার সংলাপে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রথমবারের মতো এ সংলাপে বসবে দুই দেশ। এ সংলাপের মাধ্যমে আমিরাতের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার সুযোগ পাওয়া যাবে। সংলাপে ঢাকার পক্ষে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস।
সংলাপে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, কনস্যুলার সংক্রান্ত সবগুলো বিষয় উঠে আসবে। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে দেশটিতে থাকা আমাদের কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরা। আমাদের কর্মীদের অনেকে দেখা যাচ্ছে দেশটিতে গিয়ে কাজ পাচ্ছেন না। আমরা এ বিষয়টি তুলে ধরব। বন্দিদের দেশে ফেরানোর বিষয়টি থাকবে। ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলোও থাকবে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আমিরাতের জেলখানায় প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি বন্দি রয়েছেন। ২০১৪ সালে দেশটির সঙ্গে বন্দিদের ফেরানো নিয়ে চুক্তি করা হলেও সেটি সেই অর্থে কার্যকর হয়নি। ঢাকার পক্ষ থেকে চুক্তিটি কার্যকর করার বিষয়ে বার্তা দেওয়া হবে। কূটনীতিকদের জন্য ভিসা অব্যাহতি, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা সহজীকরণ, শিক্ষা সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্বীকৃতিদানের বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া অর্থপাচার সংক্রান্ত ইস্যুতে তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে থাকবে বলে ইঙ্গিত রয়েছে।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবুধাবির সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমাদের কনস্যুলার সংলাপ হয়নি। তাদের ভারতের সঙ্গে, মিশরের সঙ্গে ছাড়াও আরও দুটি দেশের সঙ্গে কনস্যুলার সংলাপ হচ্ছে। প্রথমবারের মতো তারা আমাদের নতুন একটা মেকানিজমে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এটা আমাদের জন্য ভালো খবর।
আলোচনায় কোন বিষয়গুলোতে প্রাধান্য দেবে ঢাকা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটা মেকানিজম দরকার। এ সংলাপে আমাদের যেসব কর্মী তাদের জেলে বন্দি আছে, তাদের মুক্তির বিষয়টি থাকবে। বন্দিদের ফেরানো নিয়ে তাদের সঙ্গে একটা চুক্তি আছে, এটাকে কীভাবে একটিভ করা যায়। কর্মীদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অনেকে গিয়ে সেখানে কাজ পাচ্ছেন না। কীভাবে কো-অপারেশন বাড়ানো যায়, সে ধরনের সব বিষয়ই আলোচনায় থাকবে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চাই।
প্রথমবারের মতো কনস্যুলার সংলাপে বসা নিয়ে আমিরাতের পক্ষ থেকে বার্তা পাওয়ার পর গত ৮ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামসের নেতৃত্বে সংলাপে বসার প্রস্তুতিমূলক সভা তথা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক বসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিরা ঢাকা-আবুধাবি সম্পর্ক আর দৃঢ় করতে নতুন নতুন ক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় কনস্যুলার সংশ্লিষ্ট ইস্যু ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে আমিরাতের সহায়তা, বেসামরিক বিমান পরিবহন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর বিষয়ে পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছরের মার্চে আমিরাত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার প্রধানের সফরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দেশটির সঙ্গে চারটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এগুলোর মধ্যে ছিল— উচ্চশিক্ষা এবং বিজ্ঞান গবেষণায় সহযোগিতা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এবং এমিরেটস সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস অ্যান্ড রিসার্চের (ইসিএসএসআর) মধ্যে সহযোগিতা বিনিময়, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই) এবং দুবাই ইন্টারন্যাশনাল চেম্বারের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো।
এমআই