শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

শহীদ তিতুমীরের ১৯১ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শুক্রবার, নভেম্বর ১৮, ২০২২
শহীদ তিতুমীরের ১৯১ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সময় জার্নাল ডেস্ক:

তিতুমীর, বিপ্লবের অপর নাম। বাংলার প্রজাদের উপর স্থানীয় জমিদার এবং ইউরোপীয় নীলকরদের অত্যাচার প্রতিরোধ এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করার লক্ষে পরিচালিত আন্দোলনের নেতা শহীদ তিতুমীর। আজ তার ১৯১ তম মৃত্যু বার্ষিকী। 

তিতুমীর জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে সংগ্রাম ও তার বিখ্যাত বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। ব্রিটিশ সেনাদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় এই বাঁশের কেল্লাতেই তার মৃত্যু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে তার আন্দোলনের লক্ষ ছিল সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার। মুসলিম সমাজে শিরক ও বিদআতের অনুশীলন নির্মূল করা। মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অনুশাসন অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল তার আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ।

১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি (১১৮৮ বঙ্গাব্দ, ১৪ মাঘ) পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিতুমীরের প্রকৃত নাম সাইয়িদ মীর নিসার আলী। তিতুমীরের পূর্বপুরুষগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে বাংলায় আসেন বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন। তিতুমীর ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর (রাঃ) এর বংশধর বলে দাবি করা হয়। তিতুমীরের প্রাথমিক শিক্ষা হয় তার গ্রামের বিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসাতে লেখাপড়া করনে। তিনি ছিলেন কুরআনে হাফেজ, বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় দক্ষ এবং আরবি ও ফার্সি সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগী। তিনি ইসলামি ধর্মশাস্ত্র, আইনশাস্ত্র, দর্শন, তাসাওয়াফ ও মানতিক বিষয়ে সুপন্ডিত ছিলেন। মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে তিতুমীর একজন দক্ষ কুস্তিগীর হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। তিতুমীর ১৮২২ সালে হজব্রত পালনের জন্য মক্কা শরীফ যান এবং সেখানে তিনি বিখ্যাত ইসলামি ধর্মসংস্কারক ও বিপ্লবী নেতা সাইয়িদ আহমদ বেরেলীর সান্নিধ্য লাভ করেন। সাইয়িদ আহমদ তাকে বাংলার মুসলমানদের অনৈসলামিক রীতিনীতির অনুশীলন এবং বিদেশি শক্তির পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৮২৭ সালে মক্কা থেকে দেশে ফিরে তিতুমীর চবিবশ পরগনা ও নদীয়া জেলায় মুসলমানদের মধ্যে ইসলামি অনুশাসন প্রচার শুরু করেন। তিনি এবং তার অনুসারীরা তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ধুতির বদলে 'তাহ্বান্দ' নামে এক ধরণের বস্ত্র পরিধান শুরু করেন। তিতুমীর হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায় কর্তৃক মুসলমানদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত ‌‘দাঁড়ির খাজনা’ এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিতুমীর ও তার অনুসারীদের সাথে স্থানীয় জমিদার ও নীলকর সাহেবদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হতে থাকে। তিতুমীর তার অনুসারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলেন। ১৮৩১ সালের ২৩ অক্টোবর বারাসতের কাছে বাদুড়িয়ার ১০ কিলোমিটার দূরে নারিকেলবাড়িয়ায় তিনি বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। বাঁশ এবং কাঁদা দিয়ে দ্বি-স্তর বিশিষ্ট এই কেল্লা নির্মাণ করা হয়। অচিরেই মুসলমানদের প্রতি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং তাদের উপর অবৈধ কর আরোপের জন্য হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে তিতুমীরের সংঘর্ষ বাঁধে। কৃষককুলের উপর জমিদারদের অত্যাচার প্রতিরোধ করতে গিয়ে অপরাপর জমিদারদের সঙ্গেও তিতুমীর সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এসব অত্যাচারী জমিদার ছিলেন গোবরডাঙার কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, তারাগোনিয়ার রাজনারায়ণ, নাগপুরের গৌরীপ্রসাদ চৌধুরী এবং গোবরা-গোবিন্দপুরের দেবনাথ রায়। এ প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলা এবং কৃষকদের নিরাপত্তা দানের লক্ষে তিতুমীর এক সৈন্যবাহিনী গঠন করে তাদের লাঠি ও অপরাপর দেশিয় অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ দান করেন। 

তিতুমীরের শক্তি বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে জমিদারগণ তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ সৃষ্টি এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইংরেজদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালায়। গোবরডাঙার জমিদারের প্ররোচনায় মোল্লাহাটির ইংরেজ কুঠিয়াল ডেভিস তার বাহিনী নিয়ে তিতুমীরের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন এবং যুদ্ধে পরাজিত হন। তিতুমীরের সঙ্গে এক সংঘর্ষে গোবরা-গোবিন্দপুরের জমিদার নিহত হন। 

বারাসতের কালেক্টর আলেকাজান্ডার বশিরহাটের দারোগাকে নিয়ে তিতুমীরের বিরুদ্ধে অভিযান করে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। এ সময়ে তিতুমীর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারের নিকট জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। অচিরেই বাহিনীতে সৈনিক সংখ্যা পাঁচ হাজারে উপনীত হয়। সামরিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ব্রিটিশের বিরোধী আন্দোলনে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান। তিতুমীর চবিবশ পরগনা, নদীয়া ও ফরিদপুর জেলায় স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাকি ও গোবরডাঙার জমিদারগণ ইংরেজদের শরণাপন্ন হলে কলকাতা থেকে এক ইংরেজ বাহিনী তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রেরিত হয়। কিন্তু ইংরেজ ও জমিদারদের সম্মিলিত বাহিনী তিতুমীরের বীর বাহিনীর নিকট শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। অবশেষে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে ১০০ অশ্বারোহী, ৩০০ স্থানীয় পদাতিক, দুটি কামানসহ গোলন্দাজ সৈন্যের এক নিয়মিত বাহিনী তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর ইংরেজ বাহিনী বাশের কেল্লার উপর আক্রমণ চালায়। কামান ও আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীকে তিতুমীর তার স্থানীয় অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে বাঁশের কেল্লায় আশ্রয় নেয়। ইংরেজরা কামানে গোলাবর্ষণ করে কেল্লা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দেয়। তিতুমীরের বিপুল সংখ্যক সৈনিক প্রাণ হারায়। কয়েকদিন রক্তক্ষয়ি যুদ্ধের পর আজকের এই দিনে (১৯ নভেম্বর ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে) বহুসংখ্যক অনুসারিসহ তিতুমীর শহীদ হন। 

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল