লাবিন রহমান:
মৌ হাট। নামটা শুনলেই মনে উকি দেয় মৌমাছি আর মধুর নাম। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটা গ্রামে বেড়ে ওঠা এক মেয়ে নূরুন্নাহার। তার মধুর মৌ হাট এখন অনেকের কাছেই পরিচিত নাম। আজ তার মুখেই শুনব নারী উদ্যাক্তা হয়ে ওঠার গল্প।
গল্পের শুরুটা হয়েছিল নিজের জন্য নির্ভেজাল কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা দিয়ে। সময়টা ছিলো প্রতিকূল, করোনাকালীন এবং প্রেগন্যান্সির অ্যাডভান্স স্টেজ। নিয়মিত মধু খাওয়া আমার অভ্যাস। সেই সুবাদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের মধু খেয়েছি এবং বুঝতে পেরেছি ভালো খারাপের পার্থক্য। তো মধুর এলাকায় থেকে খাঁটি মধুটা পেতে গিয়ে যখন এতটা হয়রানি হতে হচ্ছে তখন অন্যরা কি পাচ্ছে এবং কি খাচ্ছে সেটা মাথার মধ্যে কিছুটা আলোড়ন তৈরি করছিলো।
তাই কষ্ট হলেও প্রকৃতির নির্ভেজাল জিনিসটি খুঁজে বের করা এবং তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অদম্য ইচ্ছা থেকেই "মৌ হাটে"র হাত ধরে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ।
আপনারা ভাবতে পারেন, মার্কেটে অনেক ভালো ভালো ব্র্যান্ডের মধু পাওয়া যায় এবং কিনে খাওয়াও খুব কঠিন নয়। কিন্তু সেটা না করে প্রাকৃতিক মধু খুঁজে বেড়ানোর কারণ হলো, প্রোসেসড মধুতে ঔষধি গুণ অনেক কম থাকে প্রাকৃতিক কাঁচা মধুর তুলনায়।
প্রতিটি মানুষের মতোই আমার কাজ নিয়ে কিছু বিশেষ পরিকল্পনা আছে। চাইলেও একলাফে আকাশ ছোঁয়া যায় না। তাই একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রথমত, নিজের দেশের ৬৪ টি জেলায় পৌঁছে দিতে চাই মৌ হাটের মধু। এই লক্ষ্য নিয়ে এপর্যন্ত সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ী, নোয়াখালী, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা পর্যন্ত নিয়মিত যাতায়াত মৌ হাটের।
এভাবে চলতে চলতে এক সময় দেশের বাইরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও যেন মৌ হাটের মধু সহজে পরিচিত হতে পারে তেমনই একটি ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশের অভিপ্রায় নিয়ে এগিয়ে চলা।
কখনও কখনও মানুষ পণ্য নয় বরং এক টুকরো বিশ্বাস খুঁজে বেড়ায়। আর মধুর মতো পণ্যের ক্ষেত্রে সেটাই সবচেয়ে বেশি জরুরী। মধু কেমন সেটা জানার আগে অধিকাংশ ক্রেতা বোঝার চেষ্টা করেন জিনিসটা যার কাছ থেকে নেওয়া হবে সেই মানুষটি কেমন? যদি কোনো ভাবে মানুষটির বিষয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় তাহলে মধু নিতে আর কোনো দ্বিধা থাকেনা।
শুধুমাত্র আমার পরিচিতি যখন ক্রেতা হিসেবে অনেক দূরের কোনো মানুষকে আমার কাছে নিয়ে আসে তখন মনের মধ্যে অন্যরকম প্রশান্তি কাজ করে। এমনই একজন ক্রেতা হয়েছিলেন আমার নোয়াখালী থেকে।
তিনি তার অসুস্থ এবং মৃতপ্রায় মায়ের জন্য একটু নির্ভেজাল কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। এভাবেই কেউ তার ছোট্ট সন্তানের জন্য এক টুকরো বিশ্বাস খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছে যান মৌ হাটে। আর এখানেই আমার আত্মতুষ্টি।
মৌ হাট
সি.ই.ও : নূরুন্নাহার
সময় জার্নাল/এলআর