লাবিন রহমান:
মাছ কাটলে এর আঁশ আমরা সবাই ফেলে দেই। এই আঁশ এখন রফতানি পণ্য। চীনসহ বিভিন্ন দেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এটি। আঁশ দিয়ে তৈরি পাউডার ওষুধ শিল্প, প্রসাধনী শিল্প ও খাদ্যশিল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাছের আঁশে আছে কোলাজেন ফাইবার, অ্যামাইনো এসিড, গুয়ানিনি ও বায়ো অ্যাভসরবেন্স ক্যাপাসিটি ও-এর মতো কয়েকটি বিশেষ গুণ। ফলে এই আঁশ ও আঁশ দিয়ে তৈরি পাউডার ওষুধ শিল্প, প্রসাধনী শিল্প ও খাদ্যশিল্পসহ পরিবেশ সুরক্ষার রক্ষাকবচ পণ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রশাসন শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল হচ্ছে মাছের আঁশ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে মাছের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন ৩৮ লাখ টন মাছের। এসব মাছের অন্তত ৪০ শতাংশের বহিরাবরণই আবৃত থাকে রুপালি আঁশে।
সেগুন বাগিচা কাঁচাবাজারের জাহাঙ্গীর মাছ কেটে সংসার চালান। তিনি জানান, মাছ কাটার পর শুধু মাছের উচ্ছিষ্ট বা বর্জ্য হিসেবে পরিচিত আঁশ এখন আর ফেলে দেন না। তিনি সংগ্রহ করে রাখেন। প্রতিদিন গড়ে ১০ কেজি আঁশ সংগ্রহ করতে পারেন তিনি, যা দিনশেষে পরিচিত এক জনের হাতে তুলে দেন। এতেই মাস শেষে তার বাড়তি আয় যোগ হয় আরও সাত থেকে আট হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজধানীর বড় ২২টি বাজারসহ অন্তত অর্ধশতাধিক কাঁচাবাজারে এখন মাছের আঁশ সংগ্রহ হচ্ছে। সারা দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা এমনকি উপজেলা পর্যায়ের সহস্রাধিক বাজারেও মাছের আঁশ সংগ্রহ করা হয়।
শুরুর দিকে বাজার থেকে এই আঁশ প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল। বর্তমানে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা ধরে ক্রয় করতে হচ্ছে। এটা ক্রমশ বাড়ছে।
স্থানীয়ভাবে মাছের আঁশ সংগ্রহ, সংরক্ষণ করা হয়। পরে প্রক্রিয়াজাতকরণের অংশ হিসেবে এসব আঁশ শুকানো হয়। এরপর চালুনিকরণ, অন্যান্য বস্তু অপসারণ, অবমুক্তকরণ, শ্রেণীবিন্যাসকরণ করা হয়। চুন বা ক্যালসিয়াম জাতীয় পদার্থও অপসারণ করা হয়। এরপর আমদানিকারকের চাহিদা অনুযায়ী প্যাকেটজাতকরণ করা হয়। সর্বশেষ রফতানিকারক কর্তৃক পণ্য রফতানি করা হয়।
অপ্রচলিত পণ্য হওয়ার কারণে মাছের আঁশ রফতানিতে বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে আয়কর ও উৎসে আয়কর সুবিধা, বন্ডেড ওয়্যারহাউস, ডিউ্যটি ড্র ব্যাক, ব্যাক টু ব্যাক এলসি, ব্যাংক ঋণপ্রাপ্তি ও স্বল্প সুদ সুবিধা এবং রফতানি ঋণ গ্যারান্টি স্কীম সুবিধা।
বিজ্ঞানীরা আরো পরীক্ষা করে দেখেছেন, এর গুয়ানিনি উপাদানের কারণে লিপস্টিক ও নেইল পলিশের উজ্জ্বল্যভাব ধরে রাখা এবং মেকআপ ও ব্রাশ তৈরিতেও এটি কাজে লাগে। এ ছাড়া মাছের আঁশে ‘ও বায়ো অ্যাভসরবেন্স ক্যাপাসিটি ও’-এর উপস্থিতির কারণে আঁশ দ্বারা তৈরি পাউডার কপার ও সিসার মতো হ্যাভি মেটাল জাতীয় পদার্থের দূষণ রোধে খুবই কার্যকরী। কোলাজেন ফাইবার উপাদান শক্তি উৎপন্ন করে। রিচার্জেবল ব্যাটারিতে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্নে চীন ও জাপান এ আঁশ ব্যবহার করে।
মাছের আঁশে কোলাজেন থাকায় কৃত্রিম কর্ণিয়া ও কৃত্রিম হাড় তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতির কারণে মাছের আঁশের পাউডার বিভিন্ন দেশে স্যুপের সঙ্গে পুষ্টি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সময় জার্নাল/এলআর