স্পোর্টস ডেস্ক: পাল্লেকেলেতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারে সাইফ কে হারিয়ে হোঁচট খায় বাংলাদেশ। টেস্টে সম্প্রতি সময়ে শুরুতেই হাবুডুবু খাওয়ার যে দৃশ্য তা চোখে ভাসছিল আরেকবার, আরেকটা বাজে শুরুর শঙ্কার মেঘ তখন ঘনিভূত। কিন্তু প্রতিটি মেঘাচ্ছন্ন সকালই যে খারাপ দিনে আভাস দেয় না তা কী দুর্দান্তভাবেই না প্রমাণ করলেন তামিম ইকবাল (৯০), নাজমুল হোসেন শান্ত (১২৬*), মুমিনুল হক (৬৪*)। শান্তর দুর্দান্ত শতক ও তামিম, মুমিনুলের অর্ধ শতকে পাল্লেকেলে টেস্টের প্রথম দিনে একক অধিপত্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোরটা ছিল ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো- ৩০২/২। চোখ জুড়ানো সংখ্যা, কতোদিন পর টেস্টের কোন নির্দিষ্ট দিনে বাংলাদেশ এতো ভালো খেলল গবেষণার বিষয়!
বুধবার (২১ এপ্রিল) পাল্লেকেলেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। শ্রীলঙ্কা বানিয়েছে ঘাসের উইকেট। দুই দলের একাদশেও তার প্রতিফলন, দুই দলই তিনজন পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে। এমন উইকেটে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত 'বেশি সাহসি' হয়ে গেল না? দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে সাইফ হাসান শূন্য রানে ফিরলে প্রম্নটা আরও জোড়ালো হচ্ছিল। কিন্তু দিন শেষে বাংলাদেশই চালকের আসনে।
বিদেশে গত পাঁচ বছরে মাত্র একটা টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এখনো পয়েন্টের মুখ দেখা হয়নি। ঘরের মাঠে কিছুদিন আগে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে। টেস্টে কতো দুঃখের স্মৃতি নিয়ে শ্রীলঙ্কা গেছে বাংলাদেশ। সিরিজ শুরুর আগে মুমিনুল হক বলেছিলেন, সেসব থেকে বেরুতে চায় বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক আজ কথামতো কাজও করে দেখালেন।
শুরুতে উইকেট হারানো বাংলাদেশ কুঁকড়ে না গিয়ে পাল্টা আক্রমণ করতে চেয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। যার নেতৃত্ব দিলেন তামিম। তিনে নেমে নাজমুল শান্ত ধীরে লয়ে এগিয়েছেন। কিন্তু তামিম রান তুলেছেন অনেকটা ওয়ানডে গতিতে। ঝুঁকি নিয়ে অবশ্য শট খেলেননি। উইকেট আর প্রতিপক্ষ বোলারদের আলগা বলের সুযোগটা নিয়েছেন তামিম। ৫২ বলে ফিফটি তুলে নিয়ে যেভাবে এগুচ্ছিলেন মনে হচ্ছিল টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না।
৬৩তম ওভারে বিশ্ব ফার্নান্দোর বলে নিজের ইনিংসের একমাত্র 'বাজে শটটা' খেলেছিলেন তামিম, স্লিপে ক্যাচ হয়েছেন সেই বলেই। ১০১ বলে ১৫টি চারে ৯০ রান করে ফেরা তামিম সেঞ্চুরি পাননি ঠিকই কিন্তু পাল্টা আক্রমণে বাংলাদেশকে উড়ন্ত একটা সূচনা এনে দিয়েছেন। সেই সূচনার ওপর দাঁড়িয়ে পরে লঙ্কানদের শাসন করেছেন তরুণ শান্ত।
সম্ভবনাময়ী বলে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরও দলে ডাকা হচ্ছিল শান্তকে, তা নিয়ে অবশ্য ইদানিং প্রশ্ন উঠতেও শুরু করেছিল। আজ সেই আলোচনা বন্ধ করেছেন ২২ বছর বয়সী তরুণ। দলীয় ১৫২ রানের মাথায় তামিম ফেরার আগে ১১২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন শান্ত।
তারপর তৃতীয় উইকেটে প্রায় একই গতিতে এগিয়েছে শান্ত, মুমিনুল হক। নিয়মিত ভালো বোলিং করতে পারেনি শ্রীলঙ্কান বোলাররা। ভালো বোলিং করলে শান্ত-মুমিনুল তাতে ঝুঁকিও নেননি। দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে তৃতীয় উইকেটে দুজন মিলে তুলেছেন ঠিক ১৫০ রান। এই সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে থামবে কে জানে। দুজন এখনো অবিচ্ছিন্ন। বাংলাদেশের সঙ্গে মুমিনুল-শান্তও নিশ্চয় তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন আজ।
টানা ব্যর্থতার কারণে দুজনেরই সমালোচনা হচ্ছিল। সেখান থেকে নিশ্চয় একটা মুক্তি মিলবে! ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে সীমানা ছাড়া করে শান্ত ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ২৩৭তম বলে। দিন শেষে ২৮৮ বল খেলে ১২৬ রানে অপরাজিত তরুণ ব্যাটার। তার ইনিংসে চার ১৪টি, ছক্কা ১টি। মুমিনুল ঠিক ১৫০ বল খেলে ৬টি চারের সাহায্যে ৬৪ রান করে অপরাজিত।
ম্যাচ চলাকালে ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, এই উইকেটে প্রথমে ব্যাটিং করা দল ৩০০ রান তুলতে পারলে সেটা হবে আদর্শ সংগ্রহ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই তা ছাড়িয়েে গেছে। শান্ত, মুমিনুলরা নিশ্চয় আরও এগুতে চাইবেন। ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায় থাকা মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাসরাও নিশ্চয় রানের প্রত্যাশা করছেন। এসব মিলিয়ে বলতে হবে, বাংলাদেশ বড় সংগ্রহের দিকেই যাচ্ছে।
প্রথম দিনে পতন হওয়ার বাংলাদেশের দুই উইকেটের দুটিই নিয়েছেন বিশ্ব ফার্ন্দান্দো।
সময় জার্নাল/এমআই