মোঃ আবদুল্যাহ চৌধুরী, নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ ডিসেম্বর। মাত্র এক বছর দুই মাসের মধ্যে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে তৃণমূলের প্রত্যেকটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করে শহদি ভুলু স্টেডিয়ামে জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি। সম্মেলন ঘিরে জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। শীর্ষ দুই পদে কারা আসছেন, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন-সমীকরণ।
সম্মেলনে লাখো নেতাকর্মীর সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। যেখানে সভাপতি হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হন খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম ও নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীও সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন।
দলটির র্শীষ কয়েকজন নেতা বলেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর হাতে জেলা আওয়ামী লীগের একক নিয়ন্ত্রণ থাকলেও ২০১৯ সাল পরবর্তী দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার তীব্র সমালোচনার মুখে একক আধিপত্য থেকে ছিঁটকে পড়েন তিনি। দীর্ঘ তিন বছর দলীয় সকল কর্মকান্ড থেকে দুরে থাকা একরামুল করিম চৌধুরী গত ২৩ নভেম্বর কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নিজ কৃতকর্মের ভুল স্বীকার করে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান এবং দলীয় কর্মকান্ডে আবারো নিজেকে যুক্ত করার ঘোষণা দেন।
এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির এক বছর দুই মাসের কর্মযজ্ঞতায় চাঞ্চল্যতা ফিসে এসেছে নেতাকর্মীদের মাঝে। এবারের জেলা সম্মেলন অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উৎসবমূখর হবে বলে আশাবাদি নেতাকর্মীরা।
সম্মেলন ঘিরে জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। তবে শীর্ষ দুই পদের মধ্যে সভাপতি পদে একরামুল করিম চৌধুরী এমপির নাম শোনা গেলেও গত ২৬ নভেম্বর বিকালে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বক্তব্যকালে একরামুল করিম চৌধুরী সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন না বলে ঘোষণা দেন এবং সহসভাপতি পদে রাখলে তিনি দলের জন্য কাজ করবেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর এমন ঘোষণায় অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে তার অনুসারীরা।
এদিকে সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম এবং হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী। সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন ও শহিদ উল্যাহ খান সোহেলের নাম শোনা যাচ্ছে।
তবে মাঠে আলোচনায় না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে সম্মেলনের দিন মঞ্চে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আরো একাধিক প্রার্থীর নাম যোগ হতে পারে।
প্রার্থীদের মধ্যে কে হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেই সমীকরণ এখনো নিশ্চিত না হলেও সাধারণ সম্পাদক পদে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা আর প্রাণচাঞ্চল্যতায় এগিয়ে রয়েছেন এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন। ক্লিনইমেজ ও সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন হওয়ায় জেলার সর্বত্ব তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাওয়ায় শাহিনের নাম শোনা যাচ্ছে।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস জাহের বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে আমাদের নেতাকর্মীদের মাঝে অনেকটা উৎসব চলছে। আমরা চাই এই সম্মেলনে ক্লিনইমেজের অধিকারী, দক্ষ সংগঠক, উচ্চ শিক্ষিত ও অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক স্পীকার আবদুল মালেক উকিলের ভ্রাতুষ্পুত্র এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিনকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হোক।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন বলেন, ১৯ বছর আগে সোনাইমুড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে, তারও দুই বছর আগে ওই উপজেলার ওয়ার্ড আর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। ১৪ বছর আগে সম্মেলন হয় চাটখিলে, বেগমগঞ্জে ৩ বছর আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও ওয়ার্ড-ইউনিয়ন সম্মেলন করা হয়নি। সদর উপজেলায় সম্মেলন হয় ১৩ বছর আগে। সেনবাগ, কবিরহাট, হাতিয়া ও সুবর্ণচরেও একই অবস্থা। কোন সম্মেলন হয়নি, সব জায়গায় চাপিয়ে দেয়া কমিটি!
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আমরা জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০ বছরের আমাদের দলের যে স্থবিরতা, সেই স্থবিরতা কাটিয়ে জেলার তৃণমূলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলায় কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্মেলন শেষ করেছি। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরী হচ্ছে, এতে নোয়াখালী আওয়ামী লীগ আজকে অতীতের তুলনায় অনেক স্বচল ও চাঙ্গা।
জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বলেন, আমরা দায়িত্বে আসার পর তৃণমূল থেকে সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়েছি। তাই এবারের জেলা সম্মেলন বর্ণিল ও নেতাকর্মীদের অংশগ্রহনে মুখরিত থাকবে। সভাপতি পদে প্রার্থীতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তো দীর্ঘদিন এই দলের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এবারও আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও আমাদের গর্ব প্রিয় নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেব যদি চান আমি দলের দায়িত্ব পালনে ইচ্ছা প্রকাশ করছি।
সময় জার্নাল/এলআর