ইসাহাক আলী, নাটোর:
ডোঙ্গায় আখ নিক্ষেপের মধ্য উত্তরাঞ্চলের অন্যতম ভারীশিল্প প্রতিষ্ঠান নাটোর চিনিকলের ২০২২-২৩ মৌসুমের ৩৯তম আখ মাড়াই হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মাড়াই শুরু করা মিলটির ঘাড়ে লোকসানের বোঝা প্রায় পৌনে ৩শ কোটি টাকা। গত মাড়াই মৌসুমেই লোকসানের খাতায় যোগ করে শতকোটি টাকারও বেশি। এদিকে মিলে আখ সরবরাহে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে আখের মূল্য বাড়ালেও উৎপাদন সামগ্রি ও অন্যান্য পণ্যের বাজার মূল্য বৃদ্ধির কারণে এই দাম কৃষকদের আখ চাষে টানতে পারছে না। এছাড়া কৃষকদের টাকা প্রদানের পদ্ধতিগত সমস্যাও বিড়ম্বনায় ফেলছে অনেক চাষিদের। এদিকে নানা বকেয়ায় মিলের শ্রমিক কর্মচারীরাও রয়েছেন অর্থসংকটে।
তবে মিল সংশ্লিষ্টরা বলছেন আগামী মৌসুমে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৫ বছরের মধ্যে মিলের চলতি লোকসান শুন্য কোঠায় নামিয়ে ২৭-২৮ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক
করার প্রত্যয় কর্মকর্তাদের। নাটোর চিনিকল সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৮০ হাজার মে.টন আখ মাড়াই ও ৪ হাজার ৯৬০ মে.টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যাত্রা শুরু করলো উত্তরের জেলা নাটোরের অন্যতম ভারী প্রতিষ্ঠান নাটোর সুগার মিল। এ বছর ৫৪ দিন মিল চালু রেখে ৪ হাজার ৫৩৬ একর জমির উৎপাদিত ৮০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে এই লক্ষমাত্রা পূরণ করা হবে। চিনি আহরণের হার ধরা হয়েছে ৬.২০ ভাগ। এদিকে মিলে আখ সরবরাহে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে গত বছরের চেয়ে আখের মূল্য মন প্রতি ৪০ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে উৎপাদন সামগ্রি ও অন্যান্য পণ্যের বাজার মূল্য বৃদ্ধির কারণে এই দাম কৃষকদের আখ চাষে টানতে পারবে না বলে মনে করেন কৃষকরা। এছাড়া কৃষকদের টাকা প্রদানের পদ্ধতিগত সমস্যাও বিড়ম্বনায় ফেলছে অনেক চাষিদের।
এদিকে নাটোর সুগার মিলের সিবিএ সভাপতি ফিরোজ আলী বলেন, মিলের শ্রমিক নেতাদের দাবিকয়েক বছরের বকেয়ায় মিলের শ্রমিক কর্মচারীরাও রয়েছেন অর্থসংকটে। বকেয়া পরিশোধ করে নানা দাবি করেও সুফল মিলছে না। তাই মিলকে লাভজনক করতে শ্রমিক ও চাষীদের বকেয়া পুরিশোধসহ সুবিধা প্রদান করতে হবে। ইতোমধ্যে কিছু কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে দাবি তার।
এমন নানা সংকটেও মিলকে লাভজনক করতে নানা উদ্যোগের কথা বললেন চিনিকলের মহা-ব্যবস্থাপক প্রশাসন আনোয়ার হোসেন। তিনি এ বছর থেকেই ঘুরে দাড়াতে মিলের নানা প্রস্তুতির কথা বললেন। তার দাবি এ বছর নির্ধারিত সময়ে লক্ষমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি আগামী ৫ বছরের মধ্যে মিলের চলতি লোকসান শুন্য কোঠায় নামিয়ে ২৭-২৮ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করতে কাজ করছেন তারা। মিল এলাকার ৮টি সাবজোনের ৪৮ কেন্দ্রের অধীনে আখ সংগ্রহ করে চিনিকলটি।
এর আগে শুক্রবার বিকালে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের এনডিসি, যুগ্মসচিব ও পরিচালক(অর্থ) খোন্দকার আজিম আহমেদ মিলের উদ্বোধন করেন। এ সময় নাটোর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান ও পৌর মেয়র উমা চৌধুরি জলিসহ কর্মকতা, সিবিএ নেতৃবৃন্দ ও আখচাষীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, গত মৌসুমে ২০২১-২২ মৌসুমে ৫০ হাজার মে.টন আখ মাড়াই ও ৬.৫০ রিকোভারী করে ৩ হাজার মে.টন চিনি করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এবং ৫৫ হাজার ৯৫৯ টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার চার টন চিনি উৎপাদন করা হয়েছিল। মাত্র ৪২দিনে মাড়াই দিবসে ৫০ হাজার টন আখ মাড়াই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত প্রায় ছয় হাজার টন আখ মাড়াই করতে সক্ষম হয়। অপরদিকে তিন হাজার টন চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অতিরিক্ত চার টন চিনি উৎপাদন হয়েছে। আখ মাড়াই কার্যক্রমে চিনি আহরণের হার ৫.৩৬ শতাংশ ছিল।
এদিকে গত ১১ বছরে চিনিকলটি প্রায় ২৮০ কোটি টাকা লোকসান করেছে।
এমআাই