ডাঃ আহমেদ জোবায়ের :
আজকের রাতটা কেমন বিষন্ন।
মনের গহীনে কেমন একটা হাহাকার ও বিষাদের সুর বেজে চলেছে অবিরত।
কোন কিছুতেই স্থির হতে পারিনা।
ইদানীং রাতে ঘুম আসেনা। সারারাত জেগে থাকি।
কেমন একটা অদ্ভুত নীরবতা আমার আঙ্গিনায়।
প্রানহীন চারপাশ। আতংকিত জনপদ।
মৃত্যুদূত দুয়ারে দাঁড়ায়ে।
মানুষ বাঁচতে চায়।
ডাক্তার, নার্স,পুলিশ, আর্মি, ব্যাংকার, সাংবাদিক সবাই বাঁচতে চায়।।
সব বাবারা বাঁচতে চায়।।
কেউই প্রস্তুত নয় মৃত্যুর জন্য।
কিন্ত মৃত্যুর এত খবরে প্রতিদিন মন উতলা হয়ে উঠে।
এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতেই হবে।
কবে, কখন জানিনা।
প্রিয় আম্মাপাখি জুনাইরাহ
আমার ফ্লাওয়ার অব প্যারাডাইস।
তোমার জন্য তোমার বাবাও বাঁচতে চায়।
৩৫ বছরের চলমান জীবনে অনেক অপ্রাপ্তির মাঝে তুমি যে সেরা প্রাপ্তি।
অনুভূতিহীন চারপাশে তুমি-ই একমাত্র নিস্পাপ ও সুখকর অনুভূতি।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বহুল জীবন সংগ্রামে তুমি ছিলে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত।
১৭ মাস শেষ হলো এই পৃথিবীতে তুমি এসেছো।
কিন্ত বাবাকে খুব অল্প সময়ের জন্য তুমি কাছে পেয়েছো।
দায়িত্ব আর দায়িত্ববোধ তোমার বাবাকে তোমার থেকে দূরে রেখেছে।
কেমন চাপচাপ ব্যাথা বুকে অনুভব হয়। চোখ গুলো ভিজে উঠে নীরবে বারবার।
তোমার মুখের হাসির চেয়ে বেশি সুখ একজন বাবার কাছে আর কি হতে পারে?
বাবার বুকে তুমি ঘুমিয়ে পড়তে।
কি মায়াভরা দৃশ্য।
তোমাকে ছাড়া বাবা ভালো নেই আজ।
তোমার কাছে আসার সুযোগ ও নেই আজ।
দূরে থেকেই বাবা তোমার খুব কাছে।
একদিন বড় হয়ে খুব অভিমান হবে তোমার।
বাবাটাকে স্বার্থপর মনে হবে। অনুযোগের সুরে তুমি হয়তবা অশ্রুসিক্ত হবে।
বাবাকে বুঝার আগেই বাবারা কেন হারিয়ে যায়।
ক্ষমা করে দিও সেদিন অপরাধী বাবাকে।।
শুধু এতটুকু জেনে রেখো
মানুষকে ভালবেসে সব মায়ার বাঁধন ও পিছুটান তুচ্ছ করে তোমার বাবা বিলিয়ে গেছেন মায়া ও সেবার শীতল পরশ।
প্রতিদিন কোভিড আক্রান্ত পেশেন্ট দেখছি। সাস্পেক্টেড কোভিড পেশেন্ট দেখছি।
ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন,এজমা, হাই ইউরিক এসিড, সহ অনেক রোগে ভুগছে তোমার বাবা।
নিজে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা পাবো কিনা জানিনা।
আইসিইউতে যেতে হলে চিকিৎসা করার মত সামর্থ্যও নেই তোমার বাবার।
যদি বাবাকে হারিয়ে ফেলো, ক্ষমা করে দিও মা।
তোমার বাবা পালিয়ে যায়নি মানুষের বিপদের দিনে।
এটাই তোমার গর্ব।
মাথা উঁচু করে সেদিন বলতে পারবে আমার বাবা পালিয়ে যায়নি সেদিন।
মিস ইউ মাম্মাম।