সময় জার্নাল ডেস্ক:
এক এনজিওর আপা হামাও পড়ে থাকা ডোবাগুলো শাক-সবজি চাষ করতে বলেন। প্রথমে করবের চামনি। কষ্ট করা খালি ফাও হবে। পানির মধ্য বিচি পড়লে সেগুলো জালাবে ক্যামনে। একদিন নদীত থেকে অনেকগুলো কুচুরি পানা নিয়ে আসে জড়ো করে একটেনে করনু। পরে তার মিচ্ছি আনা মাটি দিয়ে কয়েক দিন শুকানো। তার উপর বিজিগুলো ছিটে দিনু । কয়েক দিন পর দেখনু বিজি গুলো কোমা জালাইছে। এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার নারী কৃষক শরিফা বেগম।
তিনি জানান, ‘এরকম করে প্রথম শুরু হয়। পরে মোর দেখা দেখি আরো কয়েকজন এগুলো করলো। এখন মই ভালোই আছম। খাবারও পাম, বাজারত বিকে আসম’।
সবজি চাষি বিলকিস বেগম জানান, ‘হামার ঘরে সবজি চাষ দেখিয়া গ্রামের সবাই করবের চাবার নাগছে। হামরা খুব খুশি। এমাসে হাজার বারো শ‘ টাকার শাক বেঁচচি’।
উদয়ন স্বাবলম্বীর মমতা খাতুন বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের পথে অন্যতম একটি অর্জন হচ্ছে গ্রামীন নারীর বহুমাত্রিক ভূমিকা। তাদের কাজের এই স্বীকৃতি গ্রাম উন্নয়নের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে। নারীকে বাদ দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতির অগ্রগতি সম্ভব নয়।
এভাবে, কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেছেন গ্রামীন নারীরা। জমি পরিচর্যা ছাড়াও উৎপাদনসহ প্রায় সব পর্যায়ে এখন নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করছেন। এতে দেশে উৎপাদন বাড়ছে। বাজার অর্থনীতি পুরো মাত্রা পুরুষদের হাতে নিয়ন্ত্রণে থাকায় কৃষিতে নারীরা তেমন কোনো মূল্যায়ন পাচ্ছেন না।
পানির উপর ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ সম্ভব। শুরুতে হিমশিম খেলেও তিনি এখন ভাসমান পদ্ধতি সফল হয়েছেন। পানির উপর বেডসিট তৈরি করে সবজি চাষ করা সম্ভব। জমানো পানির উপর বেড তৈরি করে শীতকালীন শাক-সবজি শাক করছেন জেলা কয়েক শ’ নারী কৃষক।
সাঘাটা উপজেলায় দেখা যায়, রাস্তার পাশেই ঝাড়াবর্ষা বিল। এই বিলে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করা হয়েছে। পরপর ভাসমান আটটি বেড। তাতে কলমি শাক, লালশাক, পুইশাকসহ বিভিন্ন রকমের সবজি। কলাগাছের উপর কচুরিপানা পঁচিয়ে বেড তৈরি কার হয়েছে। প্রতিটি বেডে বীজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়াতে সবজির লতাপাতা ছড়িয়ে ঝাড় হয়ে গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেখা যায় অসময়ের বৃষ্টি ও বন্যার কারণে খাল-বিল নিচু জমি তলিয়ে যায়। সেসব জমির সবজি নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতির থেকে রক্ষা পেতে সাঘাটা উপজেলার ঝাড়াবর্ষা বিল, বিষ পুকুর বিল ও গলাকাটা বিলে পরীক্ষামূলকভাবে ভাসমান সবজি চাষ চালু করছে একটি বেসরকারি এনজিও।
এ ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে খরচ কম কিন্তু আয় বেশি হয়। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন তারা।
সময় জার্নাল/এলআর