নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ব্যয় ৭৫ হাজার টাকা এবং নির্বাচনী ব্যয় হবে ১৫ লাখ টাকা।
আর কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটার সংখ্যার অনুপাতে সর্বোচ্চ ব্যয় করতে পারবেন চার লাখ ৩০ হাজার টাকা। রসিকের ৩৩টি ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন।
মেয়র পদের প্রার্থীরা ব্যক্তিগত খাতে ৭৫ হাজার টাকা ও নির্বাচন খাতে ১৫ লাখ টাকাসহ মোট ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বিষয়টি প্রার্থীদের অবহিত করতে ইতোমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন।
এতে সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা: নির্বাচন বিধিমালায় বলা হয়েছে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ বাবদ, অনধিক পাঁচ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা, পাঁচ লাখ এক থেকে ১০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা, ১০ লাখ এক থেকে ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২০ লাখ এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাবদ অনধিক পাঁচ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা, পাঁচ লাখ এক থেকে ১০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা, ১০ লাখ এক থেকে ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং ২০ লাখ এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
বিধিমালায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর ব্যয়:
কাউন্সিলর প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ বাবদ, অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার এক থেকে ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা, ৩০ হাজার এক থেকে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার এবং ৫০ হাজার এক ও তার বেশি ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাবদ, অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা, ১৫ হাজার এক থেকে ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা, ৩০ হাজার এক থেকে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা এবং পঞ্চাশ হাজার এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
রসিকের ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে কোনো ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি নয়। কাউন্সিলর প্রার্থীরা ব্যক্তিগত খাতে সর্বোচ্চ ২০ হাজার এবং নির্বাচনী খাতে সর্বোচ্চ দুই লাখ, মোট দুই লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ১৫ হাজার পর্যন্ত ভোটার রয়েছে এমন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা ব্যক্তিগত খাতে ১৫ হাজার ও নির্বাচনী খাতে এক লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
অন্যদিকে সিটির ১১টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে, ৪৭ হাজার ৭৪৪ জন। আর সব চেয়ে কম ভোটার রয়েছে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে, ২৮ হাজার ৫৩২ জন। এই ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রার্থীরা ওয়ার্ড ভেদে সর্বোচ্চ দুই লাখ ২০ হাজার থেকে চার লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
আইন অনুযায়ী, ভোটের প্রচারপত্র বা প্রকাশনার মাধ্যমে অথবা অন্য কোনোভাবে ভোটারদের কাছে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিমত, লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য উপস্থাপনের জন্য ব্যয়ের অর্থসহ তার নির্বাচন পরিচালনার জন্য দান, ঋণ, অগ্রিম জমা বা অন্য কোনোভাবে পরিশোধিত অর্থ 'নির্বাচনী ব্যয়' বলে গণ্য হবে।
আত্মীয়-স্বজনের (স্বামী বা স্ত্রী, মাতা, পিতা, পুত্র, কন্যা, ভ্রাতা বা ভগ্নি) কাছ থেকে ধার, কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার স্বেচ্ছা প্রদত্ত দান গ্রহণ করাকে ব্যয়ের উৎস দেখানো যাবে। এক্ষেত্রে কোনো উৎস থেকে কোনো অর্থ প্রাপ্ত হলে অর্থ প্রাপ্তির পর তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে।
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনী এজেন্ট ব্যতীত অন্য কারো মাধ্যমে নির্বাচন বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পুরো ব্যয় পরিচালনা করতে হবে তফসিলি ব্যাংকের নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্ট থেকে।
নির্বাচনের পর ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ব্যয়ের রিটার্ন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে।
রসিক নির্বাচনে মোট প্রার্থী সংখ্যা রয়েছে ২৭০ জন। এক্ষেত্রে মেয়র পদে নয় জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৯২ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভোটের মাঠে।
মেয়র পদে নয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেন- জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস-এর আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন।
নির্বাচনে দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গেছে, যা চলবে আগামী ২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। গতবারের মতো এবারও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন।
এমআই