রেজাউল করিম রেজা, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
হাতের আঙুলে অস্ত্রোপচাপাচারের সময় কুড়িগ্রামের শিশু মারুফা জাহান মাইশার মৃত্যুর ঘটনায় বাবার করা মামলায় দাফনের ১২ দিন পর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করেছে। সোমবার বিকেলে মিরপুরের রুপনগর থানা থেকে আসা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও একজনের ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কুড়িগ্রাম পৌর শহরের ভেলাকোপা ব্যাপারী পাড়ায় মাইশার বাড়ির পাশ থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়।
পরে তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন স্বজনরা। অন্যদিকে সঠিক তদন্তের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস পুলিশের।
শিশু মাইশার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করার খবরে সকাল থেকেই ভীড় জমিয়েছেন আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার মানুষ। শিশু মাইশার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের পৌর এলাকার ভেলাকোপা ব্যাপারী পাড়া গ্রামে। সাড়ে চার বছর আগে মাত্র ৯ মাস বয়সে চুলার আগুনে মাইশার ডান হাতের আঙুল পুড়ে কুঁকড়ে যায়। গত ৩০ নভেম্বর ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে মাইশার আগুনে পোড়া হাতের আঙুলের অস্ত্রোপচার করার সময় শিশুটির মৃত্যু হয়।
পরে সেদিনই শিশুটির মরদেহ নিয়ে কুড়িগ্রামে ফিরে আসেন তার বাবা-মা। দাফনের আগে শিশু মাইশার গোসল করানো নারীরা দেখতে পান মাইশার নাভির নিচে পেটজুড়ে কাটা চিহ্ন ও অসখ্য সেলাই। এ ঘটনা প্রকাশ হলে মাইশাকে হত্যার অভিযোগ উঠে। অপারেশনের নামে শিশু হত্যার অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকাবাসীসহ জেলার মানুষ।
পরে ৫ ডিসেম্বর ঢাকার মিরপুরের রুপনগর থানায় চিকিৎসক ডা. আহসান হাবীব, অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ডা. শরিফুল ইসলাম ও এনেসথেশিয়ার চিকিৎসক ডা. রনির নাম উল্লেখ করে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিরপুরের রূপনগর থানায় মামলা করেন মাইশার বাবা মোজাফ্ফর হোসেন। সন্তান হত্যার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন তারা।
নিহত শিশুর মা বেলি বেগম জানান, যারা আমার বুক খালি করেছে আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই। যাতে আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়।
নিহত শিশু মাইশার পিতা মোজাফ্ফর হোসেন জানান, রুপনগর থানার কাছে আমার একটি অনুরোধ আমার মেয়ের পেট কাটা হলো কেন সেই বিচারটা যেন করে। কেন না আমি আমার মেয়ের হাতের আঙ্গুল অপারেশনের জন্য নিয়ে গেছি সেখানে পেট কেটে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি রুপনগর থানায় মামলা করেছি। এর সঠিক বিচার চাই।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এঘটনাটি খুবই দু:খ জনক। যখন আমরা জানতে পারলাম যে শিশুটি পেট কাটা হয়েছে এবং দেখতে পেলাম অসংখ্য শেলাই করা হয়েছে তখনই সন্দেহ হয় যে তার শরীর কোন অঙ্গ বের করে নেয়া হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িত চিকিৎসকদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
মাইশার মরদেহ উত্তোলন করতে আসা কুড়িগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেদওয়ান ইসলাম জানান, আদালতের নির্দেশে শিশু মাইশার লাশ উত্তোলন করে সনাক্ত ও সুরতহাল রিপোর্টের পর কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। মিরপুরের রুপনগর থানার পুলিশের পরিদর্শক নয়ন দাস জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে স্বাস্থ্য অধিদফতর আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়। হাসপাতালটি নিবন্ধন ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিল বলেও জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ৫ ডিসেম্বর মাইশাকে হত্যার অভিযোগে তার বাবা মোজাফ্ফর হোসেন মিরপুরের রুপনগর থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেয় আদালত।
সময় জার্নাল/এলআর