আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কয়েকশ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন। ১৭৫০ সালে তাদের আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ২২ কোটি, যা তৎকালীন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। ওই সময় রাজনৈতিকভাবে অসংগঠিত ভারতের জনসংখ্যা ছিল ২০ কোটির মতো আর বিশ্বের মধ্যে অবস্থান ছিল দ্বিতীয়।
এর ২৭০ বছরেরও বেশি সময় পরে ২০২৩ সালে বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার মুকুট পরতে যাচ্ছে ভারত। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন বছরের ১৪ এপ্রিল জনসংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যাবে ভারত। তার পরের দিন দেশটির জনসংখ্যা হবে ১৪২ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮৫০ জন।
অবশ্যই এই মুকুটের মূল্য রয়েছে। কিছু বিষয় পরিবর্তন হচ্ছে, এটি তার স্পষ্ট প্রমাণ। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ নেই কিন্তু চীনের আছে, তখন এটিকে আরও অস্বাভাবিক বলে মনে হবে। চীনের অর্থনীতি প্রায় ছয় গুণ বড় হলেও ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এটিকে ধরতে সাহায্য করবে। এখন থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের কর্মক্ষম বয়সী (১৫ থেকে ৬৪ বছর) জনসংখ্যা বৃদ্ধির এক-ষষ্ঠাংশের বেশি কেবল ভারতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের জনসংখ্যা দ্রুত কমার পথে। এক দশক আগে কর্মক্ষম বয়সী চীনাদের সংখ্যা শীর্ষে পৌঁছেছিল। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটির নাগরিকদের গড় বয়স হবে ৫১ বছর, যা এখনকার চেয়ে ১২ বছর বেশি। ফলে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাব বজায় রাখতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে বয়স্ক চীনকে।
বিংশ শতাব্দীতে উভয় দেশই জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমাতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিল। ১৯৫৯-৬১ সালে চীনের ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’র কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে লাগাম টানতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এক দশক পরে দেশটি ‘লেটার, লংগার, ফিউয়ার’, অর্থাৎ দেরিতে বিয়ে, সন্তান গ্রহণে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান এবং কম সন্তান নেওয়ার প্রচারাভিযান শুরু করে।
ব্রিটিশ জনসংখ্যাবিদ টিম ডাইসনের মতে, চীনে ১৯৮০ সালে প্রবর্তিত ‘এক-সন্তান নীতি’র চেয়ে এটি বেশি প্রভাব ফেলেছিল। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে প্রতিটি চীনা নারী ছয়টির বেশি সন্তান জন্ম দিতেন, ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে তা কমে তিনেরও নিচে নেমে আসে। এটি যেকোনো বড় জনসংখ্যার ক্ষেত্রে ইতিহাসে দ্রুততম জন্মহার হ্রাসের ঘটনা।
সন্তানের চেয়ে বাবা-মা বেশি থাকা একদিক থেকে সুবিধা দিলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এখন তারই মূল্য দিতে হবে চীনকে
এর কারণে উপকৃতও হয় চীন। ১৯৭০-এর দশক থেকে ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে দেশটির অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে কর্মক্ষম বয়সী জনসংখ্যা বৃদ্ধির অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। সংখ্যায় কম হওয়ায় সন্তানদের পেছনে তুলনামূলক বেশি অর্থ ব্যয়ের সুযোগ পান বাবা-মায়েরা।
কিন্তু সন্তানের চেয়ে বাবা-মা বেশি থাকা একদিক থেকে সুবিধা দিলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এখন তারই মূল্য দিতে হবে চীনকে। কারণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রজন্ম অবসরে গিয়ে জীবনধারণের জন্য তুলনামূলক ছোট প্রজন্মের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়। তবে নৃশংস এ অভিযানও ভারতে নাটকীয়ভাবে জন্মহার কমাতে ব্যর্থ হয়। দেশটিতে উর্বরতার হার কমেছে ঠিকই, কিন্তু চীনের তুলনায় কম এবং ধীরে।
বর্তমানে ভারতীয়দের গড় বয়স ২৮ বছর, সঙ্গে কর্মক্ষম জনসংখ্যাও বাড়ছে। ফলে দেশটির সামনে জনসংখ্যাগত লাভ আদায়ের সুযোগ রয়েছে।
সময় জার্নাল/এলআর