নিজস্ব প্রতিনিধি:
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তে কীভাবে পটপরিবর্তন হয়েছে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানিয়েছে র্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গে বৈঠকের পর শুক্রবার র্যাবের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা জানিয়েছেন এক শিক্ষার্থী।
তবে এ বিষয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীরা শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদরদপ্তরে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তবে র্যাবের সঙ্গে আলোচনা শেষে বেরিয়ে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তারা। যোগাযোগ করা হলে ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকা বুয়েটশিক্ষার্থী তাহমিদ বিস্তারিত জানান।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম আমরা। ডিবির কাছ থেকে কিছু বিষয় ক্লিয়ার হয়েছিলাম। আর কিছু বিষয় ক্লিয়ার হতে পারিনি। র্যাব আমাদের জানিয়েছে, তাদের তদন্তের পর কীভাবে পট-পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমে একটা জায়গার কথা বলেছিল র্যাব। তারা সেই জায়গার কথা কেন বলেছিল এবং পরে ওই সিদ্ধান্ত কীভাবে পরিবর্তন হলো। পরিবর্তনের পর নতুন যে সিদ্ধান্ত, সেটাতে র্যাব কীভাবে নিশ্চিত হলো। সবগুলো বিষয় সামনে রেখে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলেছে বেশ সময় নিয়ে।’
ডিবির চাইতে র্যাব আরও বেশি তথ্য প্রোপারলি (সঠিকভাবে) দিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তাহমিদ বলেন, ‘আমরা ক্লিয়ার হয়েছি কি না, তা আগামীকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।’
জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিকেলে বুয়েটশিক্ষার্থীরা র্যাব সদরদপ্তরে এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে আমাদের ফারদিনের মৃত্যু নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে। র্যাব কীভাবে তদন্ত করেছে, তারা যেসব বিষয় জানতে চেয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তের পার্ট টু পার্ট যেভাবে তাদের সামনে প্রেজেন্ট (উপস্থাপন) করেছি। সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শিক্ষার্থীদের আমরা জানিয়েছি। তথ্য-প্রযুক্তিগত যেসব দিক রয়েছে, সেগুলোও তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি- শিক্ষার্থীদের আর কোনো কনফিউশন (দ্বিধা) থাকবে না।’
গত ১৫ নভেম্বর র্যাব জানিয়েছিল, ফারদিনকে হত্যা করতে পারে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের রায়হান গ্যাং। রায়হান গ্যাংয়ের সবাই চিহ্নিত মাদক কারবারি।
রায়হান গ্যাংয়ের অপরাধের ধরণ ও প্রকৃতি বিশ্লেষণের পর র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের তখন এসব কথা জানিয়েছিলেন।
সর্বশেষ গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন জানান, ফারদিন নূর পরশ স্বেচ্ছায় ডেমরা সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টসহ অন্যান্য সব আলামত বিবেচনায় নিয়ে তদন্তে এমনটিই বেরিয়ে এসেছে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়- মাদক কারবারিরা ফারদিনকে হত্যা করতে পারে এমন তথ্য র্যাব ও ডিবি শুরুর দিকে জানিয়েছিল। তখন কোন তথ্যের ভিত্তিতে এ কথা বলা হয়েছিল?
এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা পেয়েছিলাম চনপাড়ার আশপাশের স্থানে ফারদিনের অবস্থান ছিল। সেসময় বিভিন্ন সাংবাদিকরাও সেখানে গেছেন, কাজ করেছেন। কেউ হয়তো তাকে চনপাড়ায় নিয়ে হত্যা করতে পারে- এমন ধারণায় তদন্ত চলে। বিভিন্ন সময় মাদক কারবারিরা অনেককে ধরে নিয়ে চনপাড়ায় ফিডিং দেয়, মালামাল লুট করেছে। চনপাড়ার আশপাশে ফারদিনের লোকেশন ছিল বলে সেখানে আমরা কাজ করেছি। তবে আমরা কখনোই বলিনি ফারদিন মাদকাসক্ত ছিলেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গে ৩ ঘণ্টা বৈঠক করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে তারা সাংবাদিকদের জানান, ফারদিনের উদ্ধার আলামতগুলো দেখে মনে হয়েছে, প্রায় সবকিছু ঠিক আছে। তবে কিছু জায়গায় গ্যাপ রয়েছে বলে মনে হয়েছে। প্রাইমারি গ্যাপ হলো যে, তাকে যে ব্রিজে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই ব্রিজে কীভাবে গেলো? কার সঙ্গে গেলো?
শিক্ষার্থীরা জানান, আলামতগুলো তাদের দেখানো হয়েছে। এগুলো তাদের কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। তারাও পয়েন্টগুলো ডিবিকে জানিয়েছেন। ডিবি শিক্ষার্থীদের পয়েন্টগুলো নিয়েও কাজ করবে।
তারা বলেন, ‘লেগুনাচালক নাকি বলেছেন- ফারদিনের সঙ্গে আরেকজন ছিলেন। তাহলে আরেকজন কে ছিলেন? এ বিষয়টি ক্লিয়ার না। এছাড়া বাকি প্রমাণাদি মোটামুটি ডিবি কংক্রিট দেখিয়েছে। ডিবির কাজের ধরন দেখে আমরা মোটামুটি সন্তুষ্ট।’
আত্মহত্যার বিষয়টি আপনারা ক্লিয়ার হয়েছেন কি না, জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আত্মহত্যার বিষয়টি তারা সেভাবে ইনফরমেশন দেখাননি। ভবিষ্যতে এ জায়গাতে (আত্মহত্যা) ডিবির কাজ করতে পারে। ডিবিও বলেছে, তারা আত্মহত্যার মোটিভ নিয়ে কাজ করবে।’
সময় জার্নাল/এলআর