লাবিন রহমান:
দিগন্তজুড়ে হলুদ আর হলুদ। যতদূর চোখ যায় শুধুই সরিষা ক্ষেত। আর তাতে ফুটে রয়েছে ফুল। শীতের এই সময়টা রাস্তার দুইপাশ হলুদের সমারোহ। এই দৃশ্য উপভোগ করতে অনেকেই চলে যান গ্রামে।
এসব সরিষা ক্ষেতে মৌচাষের বাক্স বসিয়ে থাকেন মৌচাষিরা। এতে একদিকে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নের সহায়তায় সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে মৌচাষিরা পর্যাপ্ত পরিমাণ মধু সংগ্রহ করতে পারেন। ফলে সমন্বিত এই চাষে লাভবান হন সরিষা ও মৌচাষি উভয়ই। বিভিন্ন জেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ পদ্ধতিতে সমন্বিত চাষ।
কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় উভয় জাতের সরিষা চাষ করে থাকে। দুই জাতের সরিষা নভেম্বরের শুরু থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত আবাদ করতে হয়। ফসল ঘরে উঠতে সময় লাগে জাত ভেদে ৭০ থেকে ৯০ দিন।
‘সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ বাক্স স্থাপন করলে সরিষার ক্ষতি হয়’ এক সময় কৃষকদের মধ্যে এমন ভ্রান্ত ধারণা ছিল। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করেছে।
কৃষকরা এখন জানেন যে, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ বাক্স স্থাপন করলে সরিষা উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। তাই সরিষা চাষিরা বর্তমানে মৌচাষিদের বাক্স স্থাপনের জন্য সহযোগিতা করছেন।
বিভিন্ন জেলা থেকে টাঙ্গাইল অঞ্চলে সরিষার মধু সংগ্রহে ১৫ থেকে ২০ জন মৌচাষি এসেছেন। তাদের সকলেই স্থানীয় সরিষা চাষিরা সহযোগিতা করছেন।
দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন এলাকায় মৌ বাক্স স্থাপনকারী চাঁন মিয়া জানান, তিনি গত বছর ৫০টি বাক্স দিয়ে মৌচাষ শুরু করেছিলেন। গত বছর সব খরচ বাদ দিয়ে তার দেড় লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। এ বছর তিনি ১০০টি বাক্স স্থাপন করেছেন। আশা করছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর তিনি বেশি লাভবান হবেন।
দেলদুয়ার উপজেলার কৃষক আজাহার আলী জানান, মৌ বাক্স স্থাপনের আগে প্রতিবিঘায় বারি-১৪ জাতের সরিষার উৎপাদন ছিল সাত থেকে আট টন। মৌ বাক্স স্থাপনের পর প্রতি বিঘায় সরিষা উৎপাদন এক থেকে দেড় টন বৃদ্ধি পেয়েছে।
মধু সংগ্রহকারীদের আশা, এই মধু তারা ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারবেন। আগে মধু কম সংগ্রহ করা গেলেও বর্তমানে প্রতি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৪-৫ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে মধু সংগ্রহ সবচেয়ে বেশি হয়।
সময় জার্নাল/এলআর