এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত বামনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় বই উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ভর্তি হতে আসা ও বই নিতে আসা অসংখ্য শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ফেরত যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে সেশন ফি, ভর্তি ফিসহ ৭'শ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। টাকা না দিলে বই মিলছে না শিক্ষার্থীদের। তবে, এসকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্কুলটির বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মোল্যা।
সরকারি বন্ধ না থাকলেও স্কুল বন্ধ করে স্কুলের তালার চাবী নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক এমনটাই দাবি স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির । ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাহিদ ও বিদ্যালয়ের সভাপতি কাইয়ূম মোল্যাকে বিদ্যালয়ের মাঠে ও বাহিরে ঘুরতে দেখা যায় সোমবার (০২ জানুয়ারি) বই উৎসবের দ্বিতীয় দিন দুপুর ১২ টার দিকে।
সোমবার (০২ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের অফিসসহ সকল কক্ষ তালা দেওয়া। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বই নিতে এসে শিক্ষকদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
বই নিতে ও ভর্তি হতে আসা ৮ শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বই উৎসবের প্রথম দিন ৫টি বই পেয়েছি। আজ সোমবার স্কুলে এসে দেখি স্কুলের অফিসসহ সকল রুম তালা দেওয়া।
৮ম শ্রেণীর মিম বলেন, আমাকে শুধু বিজ্ঞান বই দিয়েছে। অন্য বই পাইনি।
উপজেলার কদমী গ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাগর মিয়া জানান, তার ছেলে হামিম মিয়াকে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করানোর জন্য এসেছি, কিন্তু শিক্ষকরা না থাকায় ভর্তি না করে বই না নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
ডহরনগর গ্রামের মোরশেদা বেগম জানান, তার জমজ দুই ছেলে রাজু মিয়া ও রবি মিয়া এ বছর ৮ শ্রেণী থেকে পাশ করে ৯ম শ্রেণীতে উঠেছে। তাদের দুই ভাইকে ৯শ্রেণীতে ভর্তি ও বই নিতে এসেছি। তিনি আরো বলেন, প্রধান শিক্ষক বলেছেন ভর্তি ও সেশন ফিসহ ৭'শ টাকা লাগবে। টাকা না দিলে ভর্তি হতে পারবে না।
এ বিষয়ে স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাহিদ জানান, বই উৎসবের প্রথম দিন রবিবার (০১ জানুয়ারি) সকালে বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মোল্যা সকালে স্কুলে এসে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বই দিয়ে স্কুল থেকে চলেন যান। পরে সভাপতি সকলকে সাথে নিয়ে কিছু বই দিয়েছে। সোমবার (০২ জানুয়ারি) ভোরে বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক স্কুলের সকল রুম তালা দিয়ে রেখে চলে যায়। যার কারণে আমরা কোন শিক্ষার্থী বই দিতে পারছি না।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাইয়ূম মোল্যা জানান, বই উৎসবের প্রথম দিন বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক সকালে স্কুলে এসে কিছু শিক্ষার্থীর নিকট থেকে টাকা নিয়ে বই দিয়েছেন। জানতে পেরে সকল শিক্ষার্থীকে টাকা দিতে নিষেধ করি। পরে প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মোল্যা স্কুল থেকে চলে যায়। তিনি সভাপতি সকলকে সাথে নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীকে বই দেন।
তিনি আরো জানান, সেশন ফিসহ যাবতীয় ফি পরে নেওয়া হবে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তা মানছেন না। সভাপতি বলেন, এ বছর সেশন ফিসহ কোন কিছুই নির্ধারণ করা হয়নি। তা ছাড়া অক্টোবরের ৩০ তারিখে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মোল্যাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মোল্যা জানান, এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি বই দেওয়ার কথা বলে কারো কাছে থেকে টাকা নেয়নি। তবে যারা ৫ম শ্রেণি থেকে আমাদের স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছেন তাদের কাছে থেকে ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। অফিসের জরুরি কাজে আমি ঢাকাতে এসেছি। তবে, স্কুলের চাবি আমার কাছে নয়।
তিনি বরখাস্তের ব্যাপারে বলেন, আমাকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ তিনজন সদস্য। কিন্তু, স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির অন্য ৯ সদস্যই আমার পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন। তাহলে, আমাকে কিভাবে বৈধভাবে বরখাস্ত করা হলো! আমি সরকারিভাবে বৈধ।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, স্কুলটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে একটু অভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে। যা ঢাকা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত জানেন। আমরা বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।তিনি আরও বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে আমি আগামীকাল মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) স্কুলটিতে যাবো।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসাইন জানান, এব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। এছাড়া এব্যাপারে কোনো শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআই