লাবিন রহমান:
শীতের তীব্রতায় রাজধানীতে সাধারণ মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়ছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গৃহহীন, ছিন্নমূল ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। বাড়ছে শীতের তীব্রতা। দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীতের এ তীব্রতা। সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। কুয়াশার দাপটও চোখে পড়ার মতো।
ফুটপাতের ছিন্নমূল ও বস্তিতে বসবাসকারী নিম্নবিত্তদের অবস্থাও করুণ হয়ে পড়েছে। হঠাৎ নেমে আসা ঠাণ্ডায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করেন অনেকে।
আর শীত বাড়তে থাকায় এবারের তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতে শিশুদের ঝুঁকিটাও বেশি। শীতের কারণে শীতজনিত রোগী বাড়ছে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘন কুয়াশার কারণে দেখা মেলেনি রোদের, তাই দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে তীব্র হয়েছে শীত। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গা আর ঢাকায় ছিল ১২ ডিগ্রি।
সেগুন বাগিচা এলাকার খায়ের আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। পেশায় তিনি একজন নিরাপত্তা প্রহরি। তিনি বলেন, তীব্র শীতের কারণে রাতে ডিউটি করতে অনেক কষ্ট হয়। তিনটা চারটা গরম কাপড় পরে নিজেকে শীত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। তবু শীত যাচ্ছে না।
কথা হয় গৃহকর্মী রাহিমার সাথে। তিনি বলেন, ভোরে যখন মুগদা থেকে রয়ানা দেই সেগুন বাগিচা আসার জন্য তখন ঠান্ডা বাতাস হাত-পা অবশকরে দেয়। টুপি মোজা সোয়েটার চাদর পড়ে মনে যেন ঠান্তা শরীরের সুইয়ের মতো ফুটছে।
পথে চলতে চলতে একজন রিক্সাচালকের সাথে কথা হল। এই শীতের মধ্যে মানুষ জরুরি কাজ ছাড়া বের হচ্ছে না। বাড়িতে বুড়ো মা ও ৫ মাসের সন্তান আছে। তাদের জন্য বেশ চিন্তায় আছি। কাজে বের না হলে ঘরে চুলা জ্বলবে না।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্করা বেশি। এসব রোগীদের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বেশি। হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘন কুয়াশার কারণে দেখা মেলেনি রোদের, তাই দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে তীব্র হয়েছে শীত। সেই পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। ঘন কুয়াশা ও মেঘের আড়াল থেকে হেসে উঠছে সূর্য। বাড়তে শুরু করেছে দিনের তাপমাত্রা, কমছে শীতের তীব্র অনুভূতি।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকতে পারে। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
সময় জার্নাল/এলআর