খাদেমুল মোরসালিন শাকীর, নীলফামারী প্রতিনিধি:
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে সফলতা খুঁজে পেয়েছে। বই পড়তেও ভালবাসে। বাবা মায়ের স্কুল কলেজ জীবনের বই,পত্রিকা ও ছোট ছোট গল্পের বই অবসরে পড়তে ভালবাসে। টিভিতে কুইজ কুইজ ও চিত্রাঙ্কন অনুষ্ঠান দেখে কুইজ ও চিত্রাঙ্কনের প্রতি বাড়ে আগ্রহ। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিযোগীতায় কুইজ কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েও প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে অসংখ্য পুরষ্কার লুফে নিয়েছে। ধর্মীয় কাজের ব্যাপারেও যথেষ্ট আগ্রহ তার।
বাবা মোঃ হেদায়েত হোসেন গনেশ আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা হোমায়রা পারভীন দলিরাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত)। বাবা হেদায়েত হোসেন উপজেলা শিক্ষা অফিসের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ইংরেজি,গণিত ও সঙ্গীত প্রশিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পাশাপশি তিনি বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কিশোরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি হিসাবে দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সেই সুবাদে বাবার কাছ থেকে সে কালচারাল প্রোগ্রামের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে। খেলাধুলার ব্যাপারেও নেই কোন কমতি। যে কোন মানুষের কথা শুনে সে উপস্থিত ভাবে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিতে পারে। বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে সে গল্প তৈরীর পাশাপাশি অভিনয় করে দেখাটা তার কাছে সময়ের ব্যাপার মাত্র।
গল্পটি দলিরাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প ম শ্রেণীর ছাত্রী স্কুল শিক্ষক দম্পতির একমাত্র কন্যা মেধাবী শিক্ষার্থী ‘ফায়িকা ইসরা’র কথা বলছি। গত বছরের জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগীতায় ১৮ মে ২০২২ সালে উপজেলা পর্যায়ে ক গ্রুপে ‘বৃদ্ধাশ্রমের মা’ বিষয়ে উপস্থিত অভিনয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে জেলা পর্যায়ে অংশ গ্রহনের সুযোগ পায়। ওই মাসের ২২ তারিখে জেলা পর্যায়ে ক গ্রুপে ‘মুক্তিযোদ্ধার মা’ বিষয়ে বিচারকদের তাক লাগিয়ে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় করার সুযোগ পায়। ছোট ফায়িকা যতই সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার মনোবল ততোই বেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়ে যখন অংশ নেয় ফায়িকা ইসরা তখন সে আনন্দে অংশ নেয় সেই প্রতিযোগীতায়।
২৯ মে বিভাগীয় পর্যায়ে উপস্থিত বিচারকদের রেখে দেয়া লিচু চুরি করতে সক্ষম হয় ফারিয়া ইসরা। বিভাগীয় পর্যায়েও ৮ জেলার প্রতিযোগীদেরকে পিছনে ফেলে ‘লিচু চোর’ বিষয়ে উপস্থিত অভিনয় করে জাতীয় পর্যায়ের টিকিট নিশ্চিত করে রংপুর বিভাগ তথা উত্তরা লকে সম্মানিত করেছেন।
বিভাগীয় পর্যায়ে উপস্থিত অভিনয়ে ফায়িকা ইসরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় গোটা নীলফামারী জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এমন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মহল থেকে শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানাতে থাকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় পর্যায়ে শিশু পুরস্কার প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহন করে “পরীক্ষায় ভাল ফলাফল” বিষয়ে উপস্থিত অভিনয় করে দেশ সেরা হয়ে স্বপ্নের উঁচু সিড়িতে উঠেছে শিশু কন্যা ফায়িকা ইসরা। সে এখন তার মায়ের স্কুল দলিরাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ শ্রেণীর ছাত্রী।
ফায়িকা ইসরা’র বাবা প্রধান শিক্ষক হেদায়েত হোসেন ও মা হোমায়রা পারভীন মেধাবী ইসরা’র জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। সে যেন উচ্চ শিক্ষা লাভ করে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে।
ফায়িকা ইসরা বলেন, আমি দেখেছি আমার গ্রামের অনেক গরীব মানুষ চিকিৎসার জন্য বড় বড় চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অর্থের অভাবে ভাল চিকিৎসা নিতে পারে না। আমি চিকিৎসক হয়ে গরীব অসহায় মানুষকে ভাল চিকিৎসা সেবা দিতে চাই। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, ফায়িকা ইসরা আজ গোটা দেশের জন্য গর্বের। সে একদিন অনেক বড় মানুষ হবে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন,ফায়িকা ইসরা নীলফামারীর গর্ব। তার এ অদম্য মেধাকে কাজে লাগাতে পারলে সে একদিন বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
এমআই