গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে পদাবনতির শাস্তিকে অন্যায় বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান। তাঁর ভাষায়, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে।’ সোমবার (১ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি তুলে ধরেন সামিয়া রহমান।
প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানান সামিয়া রহমান। সেইসঙ্গে পদাবনতির শাস্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
সামিয়া রহমান বলেন, ‘২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ডিন অফিস থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়, আপনি ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান যৌথভাবে যে লেখাটি জমা দিয়েছেন সেটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটি শোনার পর আমি খুব অবাক হলাম। কারণ, আমি সাম্প্রতিক সময়ে ডিন অফিসে কোনো লেখা জমা দিইনি। এ সংক্রান্ত প্রমাণও আমার কাছে আছে।’
এ বিষয়কে ‘ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে এর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ কেউ এবং কিছু শিক্ষক জড়িত রয়েছেন বলে ইঙ্গিত করেন সামিয়া রহমান। তবে তাদের নাম না বলে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে তা বের করতে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
সাংবাদিকতার এই শিক্ষক বলেন, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আমি জানতে পারি লেখাটি ছাপা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ডিন ফরিদউদ্দীন স্যার আমাকে ফোনে জানান, তোমার যে লেখাটি ছাপা হয়েছে, এ লেখায় তুমি চৌর্যবৃত্তি করেছ, এমন অভিযোগ করেছেন তোমার বিভাগের দুজন শিক্ষক। তারা তোমার শাস্তি চান। তখনই আমি ফরিদ স্যারের কাছে জানতে চাই, কোন লেখাটি। তখন তিনি তার অফিসে আমাকে ডেকে লেখা ও অভিযোগের বিষয়টি জানান। কিন্তু মারজান অসম্পূর্ণ একটি লেখা আমাকে না জানিয়ে ডিন অফিসে জমা দেয়। সে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি এবং আমাকেও বিষয়টি জানায়নি। আমি স্বীকার করছি, আমার দায়িত্ব ছিল কী লেখা হচ্ছে বা কী যাচ্ছে, ওই বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া। কিন্তু মারজান যে ডিন অফিসে আমার অনুমোদন ছাড়া লেখাটি পাঠিয়ে দিয়েছে, বিষয়টি আমি জানতাম না। লেখা ছাপা হওয়ার পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেহেতু আমি জড়িত ছিলাম না, তাই দেরি না করে সেটা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাই ডিন স্যারকে। আমি ওই সময় লেখা প্রত্যাহারের আবেদন করি, সেই স্বাক্ষরযুক্ত চিঠিও আছে আমার কাছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনার জন্য জার্নালের রিভিউয়ার ও বোর্ডের শাস্তির সুপারিশ ছিল। কিন্তু ‘তাঁদের শাস্তি হয় না, কারণ তাঁরা প্রতিষ্ঠিত বলে বিশ্ববিদ্যালয় তা সুকৌশলে এড়িয়ে যায়, আর বলির পাঁঠা হই আমি। প্রতিহিংসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাজনীতির নোংরামির চরম শিকার হলাম আমি।’
শিকাগো জার্নালের যে ব্যক্তির ই-মেইলের কথা বলা হয়েছে- সেটি ভুয়া বলে দাবি করেন সামিয়া রহমান বলেন, ‘আমার লেখায় প্লেজারিজমের মূল দলিল হিসেবে তদন্ত কমিটি শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যালেক্স মার্টিন পরিচয় দিয়ে যে চিঠিটি আমলে নেওয়া হয়েছে সেটিও পুরোপুরি মিথ্যা। এমন একটি দলিল আমার হাতে রয়েছে। আমি শিকাগো ইউনিভার্সিটিতে যোগাযোগ করার পর তারা জানিয়েছে, অ্যালেক্স মার্টিন বলে কেউ নেই এবং তারা এ ধরনের চিঠি পাঠায়নি। শিকাগো জার্নালের এডিটর নিজেই এটি স্বীকার করেছেন। তাই পুরো ঘটনাটি মিথ্যা। আমাকে ফাঁসানোর জন্য ভুয়া চিঠিটি তৈরি করা হয়।’
গত ২৮ জানুয়ারি একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান এবং অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের পদাবনতি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি পিএইচডি গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ওমর ফারুককেও একই শাস্তি দেওয়া হয়।
জানা যায়, সামিয়া ও মারজানের শাস্তি নির্ধারণে গঠিত ট্রাইব্যুনাল দুজনের একটি করে ইনক্রিমেন্ট বাতিলের শাস্তি প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিন্ডিকেট সেই প্রস্তাব নাকচ করে দুজনকে পদাবনতি দিয়েছে।