লাবিন রহমান:
একটু অবসর পেলেই দৃষ্টি এবং মন জুড়াতে চলে যেতে পারেন সাবদি। তার আশপাশের গ্রামে। আপনার জন্য অপেক্ষা করছে অপরূপ সৌন্দর্যের অন্য এক ভুবন।
সারি সারি ফুলের গাছ। লাল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুল এবং সবুজ পাতায় মোড়ানো অজস্রগাছ। পুরো মাঠ যেন রংয়ের মেলা। চারদিক থেকে হাওয়ায় ভেসে আসছে বাহারি ফুলের গন্ধ। ফুলের গন্ধে ম ম করা একটি গ্রাম সাবদি।
বিভিন্ন রঙের গাঁদা, চেরি, চন্দ্রমল্লিকা, জবা, সূর্যমুখী, গ্যালেরিয়া, ডালিয়া, স্টার, মাম, কাঠমালতি, বেলি, ঝাড়বাড়া ও জিপসিসহ অন্তত চল্লিশ প্রকারের দেশি-বিদেশি হরেক রকমের ফুল চাষ হচ্ছে এখানকার বাগানগুলোতে।
স্থানীয় অঞ্জনা রানী বলেন, তিনটি দিবসকে সামনে রেখেই প্রতিবছর ফুল চাষ করে থাকেন তারা। বিশ্ব ভালোবাসা, পহেলা ফাল্গুন ও মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে জমি ও বাড়ির আঙ্গিনায় ফুলের চাষ করেন তারা।
ঢাকার কাছেই নারায়ণগঞ্জের বন্দরের সাবদি গ্রাম। এ গ্রামের আশপাশের সব জমি ও বাড়ির আঙ্গিনায় কাঠমালতি, গাঁদা, ডালিয়াসহ হরেক রকমের ফুলের বাগান। সাবদি গ্রামসহ আশপাশের আরো গ্রামগুলোতে কেউ পা রাখলেই বিস্মিত হয়ে ওঠে। গ্রামগুলোকে ঘিরে শুধু বাগান আর বাগান। কয়েক বর্গমাইল এলাকাব্যাপী গাঁদা, ডালিয়া ও জিপসি ফুলের গুচ্ছ গুচ্ছ বাগান।
বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে গ্রামগুলোর রাস্তার দুই ধারে হাজারো কাঠমালতির সারি সারি বাগান। সারা গ্রামের সব জমিতে ফুল আর ফুল। ফুলের সাম্রাজ্য সাবদি ছাড়াও দেখা মেলে দিঘলদী, সেলশারদী, মাধবপাশা, আইছতলাসহ সোনারগাঁও উপজেলার সম্ভুপুরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে। এসব গ্রামে কাঠমালতি, গাঁদা, বেলী ও জিপসি ফুলের বাগান করে শতাধিক মানুষের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তাই সাবদি ও দিঘলদী গ্রামকে এখন সারা দেশে ফুলের গ্রাম নামে পরিচিতি লাভ করে। ফুলের চাষাবাদ করে এ এলাকার লোকজন তাদের ভাগ্যের চাকার পরিবর্তন করেছে।
ডালিয়া চাষি মোছলেউদ্দিন জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে ডালিয়ার চাষ করেছেন। এক হাজার চারা ১০ টাকা দরে ১০ হাজার টাকার চারা রোপণ করেছিলেন। গত চার মাসে মজুরি ও সারের খরচ বাবদ আরো ৪০ হাজার টাকা গেলেও এ পর্যন্ত তিনি প্রায় এক লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন আরো ফুল জমিতে রয়েছে।
ফুলচাষি কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, কাঠবেলী ফুলের চাষ বেশি হয়ে থাকে। কারণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও ভালোবাসা দিবসে এর চাহিদা থাকে। আর এ কারণে এই ফুল চাষের প্রতি চাষিদের আগ্রহ বেশি। গ্ল্যাডিওলাস ফুল এক বিঘা জমিতে চাষ করা হলে প্রায় আট হাজার স্টিক পাওয়া যায়।
এ ছাড়াও এখানে ডালিয়া, জিপসি, আলমেন্দা, গাঁদা ও রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করা হয়। ফুলচাষিরা জানান, তারা রবিশস্য চাষ করে যা পান তার থেকে আট-দশগুণ বেশি লাভবান হচ্ছেন ফুল চাষ করে। এ কারণে অনেকেই বাপ-দাদার আদিম চাষ পরিবর্তন করে ফুল চাষের প্রতি ঝুঁকেছেন। আর এতে লাভও হচ্ছে। এ গ্রামের মানুষ ফুল চাষ করে তাদের পুরো এলাকার চিত্র পাল্টে দিয়েছে। গ্রামের সবাই এখন স্বাবলম্বী।
বদলে গেছে এ গ্রামের দৃশ্যপট। ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা শান্ত পরিবেশের গ্রামগুলোতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার লোক জড়িত আছে ফুলবিষয়ক বাণিজ্যে। তারা ফুল উৎপাদন, ফুলের মালা তৈরি ও ফুল বিক্রিতে সরাসরি জড়িত আছেন।
প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ফুল ঢাকা শাহবাগ ও চট্টগ্রামের ফুলের আড়তে যায়। এখানকার ফুল রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব প্রান্তের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এমনকি চাষকৃত ফুল কয়েকটি দেশে রফতানিও করা হয়। এতে যেমন কৃষকের লাভ বেড়েছে তেমনি অন্য দিকে বেড়েছে দেশের সুনাম।
সময় জার্নাল/এলআর