মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বেতন বৃদ্ধি করে কঠোর শাস্তিতেই কমবে দুর্নীতি

সোমবার, জানুয়ারী ২৩, ২০২৩
বেতন বৃদ্ধি করে কঠোর শাস্তিতেই কমবে দুর্নীতি

মোঃ এমদাদ উল্যাহ:

ওবায়দুল হক(ছদ্মনাম) পুলিশ বিভাগে উপ-পরিদর্শক হিসেবে চাকরি করেন। বেতন পান সর্ব সাকুল্যে ৩০-৩২ হাজার টাকা। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের একটি থানায় দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর পিতা-মাতা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। গ্রামের বাড়ি ফেনীতে হলেও ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার কারণে ঢাকা শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ছেলে-মেয়ের শিক্ষা বাবদ খরচ বৃদ্ধি, যানবাহন, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধিসহ আনুসাঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রাপ্ত বেতন দিয়ে তিনি সংসার চালাতে পারছেন না। পরিবারের সদস্যদের ভরন-পোষণ মেটাতে এক প্রকার ‘বাধ্য’ হয়ে তিনি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন। ২০২০ সালের শেষের দিকে থানা এলাকার একটি বাজার থেকে এক ভাড়াটিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসীকে ঘুম থেকে উঠিয়ে কোন কারণ ছাড়াই থানায় নিয়ে যান। আটককৃত প্রবাসীর আত্মীয় তাদের পরিচিত তিন পুলিশ সুপারের পরিচয় দেন। এরমধ্যে হাইওয়ে পুলিশের একজন পুলিশ সুপার উপ-পরিদর্শকের সাথে কথাও বলেন। এ সময় তিনি পুলিশ সুপারকে প্রবাসীকে আটকের কারণ বলতে পারেননি এবং কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিবেন বলে স্বীকার করেন। কিন্তু থানা এলাকার এক দালালের মাধ্যমে প্রবাসীর আত্মীয় থেকে ৩৫ হাজার টাকা আদায় করেই প্রবাসীকে ছেড়ে দেন। এ ঘটনায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ দেওয়ার পর উপ-পরিদর্শক ওবায়দুল হক সাময়িক শাস্তি ভোগ করেন। এরপর তিনি চূড়ান্ত তদন্তের আগে প্রবাসীর আত্মীয় স্বজনের কাছে বাড়িতে এসেও ক্ষমা চান এবং স্বাক্ষীদেরকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোন চেষ্টায় সফল হতে পারেননি তিনি। এক স্বাক্ষীর কাছে উপ-পরিদর্শক আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাই, আমাদের তো বেতন কম, সংসারে কত খরচ বুঝেন, আপনারা না দিলে পাবো কোথায়?’ বেশ কয়েক মাস ওই উপ-পরিদর্শকের বেতন আটকে থাকায় তিনি কষ্টে জীবন যাপন করেন। অনেকে নতুন করে হয়রানির ভয়ে নানা নির্যাতন সহ্য ও অর্থ শেষ করেও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় না। খোদ, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারাই দুর্নীতির সাথে জড়িত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সব ক্ষেত্রে ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ অবস্থা। অর্থ্যাৎ সামান্য টাকা ঘুষ বা বাড়তি টাকা নিজের কাজটি সেরে নেয়াই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। মূলত, সব সেক্টরেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দেয়া যায়। ভুক্তভোগী প্রবাসীর মতো সাহস করে অভিযোগ করার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলেই সব সেক্টরে অনিয়ম বন্ধ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে চাকরি করেন এমন কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন। নানা অজুহাতে একবারের কাজ ৩-৪ বারও করাচ্ছেন। কর্মকর্তা নিজে ভুল করলেও হয়রানি সাধারণ মানুষকেই ভোগ করতে হয়। বিশেষ করে প্রবাসীদের সেক্টর পাসপোর্ট, ম্যানপাওয়ার, ইমিগ্রেশনে কর্মকর্তাদের হয়রানি এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও অন্য সব সেক্টরেও একই অবস্থা। 

‘সাধারণ মানুষকে পদে পদে হয়রানি থেকে মুক্তির উপায়’-শীর্ষক বিষয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী শেখ ফরিদ। সম্প্রতি তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, নারী নেত্রী ও প্রবাসীদের সাথে পৃথক পৃথক সভা করে নানা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। উন্নত বিশে^র নিয়ম-কানুন সবার সাথে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের কর্মরত ব্যক্তিদের বেতন আমাদের দেশে কর্মরত ব্যক্তিদের থেকে দ্বিগুন বা তিনগুন বেশি। সেখানে সরকারিভাবে অনিয়ম রোধে সব সেক্টরে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে ওইসব দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মূলত একজন স্বেচ্ছাসেবীর মত কাজ করে। তাদের আন্তরিকতা সেবাগ্রহীতাকে মুগ্ধ করে। অথচ আমাদের দেশে কর্মকর্তাদের আচরণ তার উল্টো। বেশির ভাগ সময় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কর্মকর্তারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।  

আমাদের দেশে দূর্নীতি বন্ধে কয়েকটি প্রস্তাবনা 

বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত ব্যক্তিদের বেতন দ্বিগুন বা তিনগুণ বৃদ্ধি করেই সব সেক্টরে ঘুষ-দূর্নীতি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা। ভ্যাট আদায়ে সকলকে উৎসাহিত করা। নীতিবান কর্মকর্তাদের পুরস্কার হিসেবে পদোন্নতি দেয়া। এক আইডিতে একজন ব্যক্তির সব তথ্য সংগ্রহে রাখা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সকলকে সমান চোখে দেখা। এসব প্রস্তাবনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে দূর্নীতি শূন্যের কোটায় চলে আসবে।

কুমিল্লা জেলা নারী নেত্রী ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আখতার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত ব্যক্তিদের আরও আন্তরিক হতে হবে। দুর্নীতি কমে গেলে একটি দেশ স্বল্প সময়ে উন্নত হতে পারে। 

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল