বুধবার, জানুয়ারী ২৫, ২০২৩
বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডেস্ক:
পৃথিবীর ‘ইনার কোর’ অর্থাৎ পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরি থেকে হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে নিজের উপস্থিতি টের পাইয়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা অনেক বছর ধরেই দাবি করে এসেছেন যে, ভূভাগ বরাবর পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল অনবরত ঘুরে চলেছে। কিন্তু তার ঘূর্ণনের দিক সব সময় একমুখী হয় না। সময় বিশেষে যা দিক পরিবর্তনও করে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
বেষকদের দাবি, ঘড়ির কাঁটার দিকে পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলের ঘূর্ণন শুরু হলে কয়েক বছর পর তা আবার ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরতে শুরু করে। মাঝে কিছু সময়ের জন্য এই ঘূর্ণন থেমেও যায়। ২০০৯ সালেও পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ থমকে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তারপর আবার বিপরীত দিকে ঘুরতে শুরু করে।
সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রের খবর, চিনের পিকিং ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন, মোটামুটি প্রতি ৩৫ বছর অন্তর পৃথিবীর ইনার কোর ঘূর্ণনের দিক পরিবর্তন করে। একটি সম্পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পূর্ণ করতে সাত দশক সময় লাগে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা। ১৯৭০ সালের গোড়ার দিকে প্রথম বার পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলের ঘূর্ণনের অস্তিত্ব টের পান বিজ্ঞানীরা।
তাদের অনুমান, আবার ২০৪০ সালের মাঝামাঝি সময়ে দিক পরিবর্তন করে উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করবে কেন্দ্রস্থল। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট তরঙ্গের গতিপ্রকৃতি পরীক্ষা করতে গিয়ে ১৯৩৬ সালে ‘ইনার কোর’ আবিষ্কার করেন গবেষকরা। ক্রাস্ট, ম্যান্টল এবং কোর— এই ৩ ভাগে বিভক্ত রয়েছে কেন্দ্রস্থল।
১৯৯৬ সালের একটি গবেষণায় প্রকাশ্যে আসে যে, তিন দশক ধরে সিসমিক তরঙ্গের চলাচলের মধ্যেও পরিবর্তন লক্ষ করেছেন গবেষকরা। তা সামান্য হলেও নজরে পড়ার মতো। ম্যান্টল এবং ক্রাস্টের ঘূর্ণনের গতিবেগের চেয়ে কোর এলাকার ঘূর্ণন প্রতি বছর বেড়ে চলেছে বলে দাবি গবেষকদের একাংশের।
পিকিং ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হওয়া সমস্ত ভূমিকম্পের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছেন যে, ঘূর্ণনের এই পরিবর্তন সম্ভবত দিনের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত। পৃথিবী নিজের অক্ষে যে ভাবে প্রতিনিয়ত ঘুরে চলেছে, তার উপরেও সামান্য প্রভাব ফেলতে পারে কেন্দ্রস্থলের ঘূর্ণন।
কিন্তু এই ঘটনার ফলে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গবেষকরা অবশ্য জানিয়েছেন, এর ফলে কোনও বিপদের আশঙ্কা নেই। বিশ্ববাসী এই ঘূর্ণনের ফলে কিছু টেরও পাবেন না। তবে, ভূগর্ভের প্রতিটি স্তরের একে অপরের সঙ্গে যে যোগসূত্র রয়েছে তার প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। কেন্দ্রভাগ থেকে উপরের দিকে কৌণিক ভরবেগের আদানপ্রদান এবং মহাকর্ষীয় সংযোগের ফলে এই যোগসূত্র স্থাপন হয়েছে।
পিকিং ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের এই গবেষণা ভবিষ্যতে অন্য গবেষকদের টেস্ট মডেল তৈরিতে সাহায্য করবে। পৃথিবীকে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতেও এই গবেষণার অবদান অনস্বীকার্য হয়ে উঠবে বলে দাবি করেছেন তারা।
সূত্র: আনন্দবাজার
/আইপি