এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট: দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়াসহ প্রচন্ড তাপদাহের কারনে চলতি বছরে সুন্দরবনে মধুর দেখা পাচ্ছেন না মৌয়ালরা। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বনের গভীরে ২/১টি মৌচাক পেলেও তাতে তেমন মধু পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু পাওয়া গেলেও তেমন স্বাদ নেই এবং অনেকটা কালো রংয়ের।
মৌয়ালদের মতে, চলতি বছরের অনাবৃষ্টির কারনে বনের বিভিন্ন গাছের ফুল শুকিয়ে ঝড়ে গেছে।তাই গোটা সুন্দরবন জুড়ে এবার মধুর চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টির উপর নির্ভর করে মৌচাকে মধু বৃদ্ধি। যেহেতু বহুদিন বৃষ্টির দেখা নেই, তাই ফুলেও মধু জমে নাই।
বন-বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মধু আহরন মৌসুমে ২হাজার ৪৫০কুইন্টাল মধু ও ৭১৫ কুইন্টাল মোম আহরনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা
হয়েছে।তবে, এবছর পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কিত খোদ বন-বিভাগ। বন সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও যুবলীগ নেতা মো. জালাল আহম্মেদ সহ সোনাতলা, বগী ,চালিতাবুনিয়া এলাকার কয়েক জন মৌয়াল বলেন, এবার জংঙ্গলে মধু পাওয়া খুবই দুস্কর।
মাইলের পর মাইল খুঁেজও মৌচাক পাওয়া যাচ্ছে না । হাতে গোনা ২/৪টি পাওয়া গেলেও তাতে মধু হয় ১ থেকে ২ কেজি । প্রতি কেজি মধু পাইকারী বাজারে এক হাজার টাকা করে বিক্রি করলেও পুজিঁ বাঁচবে না। তার পরেও প্রত্যেক মৌয়ালকে ২ কেজি করে মধু সংশ্লিষ্ট ফাঁড়ি সহ ক্যাম্পের বনরক্ষীদের ঘুষ দিতে হবে। কারন এটা নাকি শরনখোলা রেঞ্জেরে (এসিএফ) স্যারের নির্দেশ।
যার ধারা বাহিকতায় মৌয়ালদের কাছ থেকে জোর পুর্বক মধু আদায় করতে গিয়ে উভয় পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ১৬ এপ্রিল বিকেলে শরনখোলা রেঞ্জের কোকিলমনি টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা তাদের সন্নিকটে থাকা পাঁচ মৌয়ালকে আটক করে এবং তাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়।
নির্যাতনের শিকার বন লাগোয়া সোনাতলা গ্রামের বাসিন্দা মো. শহিদুল হাওলাদার (৩৩), মো. ছলেমান হাওলাদার (২৯), মো. রফিকুল গাজী (৪১), মো.আফজাল হোসেন(৪৩) ও রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. বেল্লাল হোসেন (২৭)। এমনকি বনরক্ষীদের কাছে ওই মৌয়ালদের জমা রাখা ৫০ মন মধু সহ নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওই ক্যাম্পের বনরক্ষীরা আত্মসাৎ করে বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিত মৌয়ালদের স্বজনরা।
তবে, বন বিভাগ দাবী করেন , অভায়ারণ্যে এলাকায় প্রবেশ করে বনজ সম্পদ আহরণ করায় ওই মৌয়ালদের ১৬ এপ্রিল আটক করা হয়। পরে বন আইনে মামলা দিয়ে ১৭ এপ্রিল কোর্টে চালান করা হয়।
এ বিষয়ে পুর্ব সুন্দরবনের শরনখোলা ষ্টেশন কর্মকর্তা (এসও) আ. মান্নান জানান, গত ১ এপ্রিল হতে শরনখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে হতে মধু আহরণের জন্য মৌয়ালদের অনুমতি (পাস) দেওয়া শুরু হয়। চলতি মৌসুমে সঠিক সময়ে বৃষ্টি পাত না হওয়ার কারনে গত বছরের তুলনায়, মধু উৎপাদন তিনের এক ভাগ বলা চলে।
তিনি বলেন, বনরক্ষীদের হাতে কোকিলমনি এলাকায় মৌয়াল নির্যাতন ও তাদের আহরিত মধু এবং টাকা লুটের অভিযোগটি সঠিক নয়। আর ওই কারনে কেউ পাস পারমিট (স্যালেন্ডার) করছেন না। আসল কথা হলো বনে এবছর মধুর চরম সংকট থাকায় তাদের চালান উঠবে না।তাই কিছু মৌয়াল (পুনরায়) পাস নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন এবং এসিএফ (স্যারের) নির্দেশে মধু ঘুষ রাখার বিষয়টি মৌয়াল সহ অন্যদের একটি মনগড়া অভিযোগ।
অন্যদিকে, এ বিষয়ে জানতে (এসিএফ) মো. জয়নাল অবেদীনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি তা রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সময় জার্নাল/এমআই