এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট প্রতিনিধি:
সুন্দরবনে হঠাৎ হরিণ শিকার বেড়ে গেছে। বন তীরবর্তী এলাকার শিকারীরা বেপরোয়া হয়ে নিয়মিত হরিণ মেরে মাংস ও তার চামড়া বিক্রি করছে। কাকড়া শিকারের টোপ বানাতে এক শ্রেণীর জেলে ব্যাবহার করছে হরিণের মাংসও। তবে এসব অসাধু শিকারীরা ধরা পড়ছেন। গত ১৫ দিনে এ চক্রের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৬ কেজি হরিনের মাংস, চারটি চামড়া, হরিণ ধরা ফাঁদ, ২০ রাউন্ড গুলি ও একটি ট্রলার।
এ ঘটনায় ১০ শিকারীকে আটক করেছে বনরক্ষিরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলেরা জানান, হরিণ শিকার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। গভীর বনে ফাঁদ পেতে হরিণ মেরে মাংস বিক্রি করছে শিকারীরা। শিকারীদের বিরুদ্ধে কথা বললে হুমকি দেওয়া হয় তাদেরকে। কাঁকড়া শিকারীরাও ব্যাপক ভাবে হরিণ মেরে কাকড়ার খাবার তৈরি করে থাকে বলে জানান তারা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলার সোনাতলা, পানিরঘাট, রাজাপুর, রসুলপুর, মোরেলগঞ্জের জিউধরা, পাথরঘাটর চরদুয়ানী, জ্ঞানপাড়া এলাকার শিকারীরা ব্যাবসায়ীক উদ্দেশ্যে জেলে বেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করে হরিণ শিকার করে লোকালয়ে নিয়ে আসে। অনেক চোরা শিকারী আবার গোপনে সুন্দরবনে ঢুকে হরিণ মেরে থাকে।
রামপাল ও সাতক্ষীরা এলাকার কাকড়া জেলেরা কাঁকড়ার টোপ বানাতে নিয়মিত হরিণ শিকার করছে বলে জানা গেছে।এছাড়া সুন্দরবনের সুপতি, দুবলা, কটকা, কচিখালী, বাদামতলা, চান্দেশ্বর, টিয়ারচর, কোকিলমুনি, আন্ধারমানিকসহ গভীর বনের সুবিধাজনক স্থানে লাইলনের ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে থাকে। তারা মছের পেটিতে বরফ দিয়ে সুবিধা জনক সময় লোকালয়ে পাচার করে থাকে। প্রতি কেজি হরিণের মাংস ৮ শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।এদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় শিকারীরা নিয়মিত হরিণ শিকার করে আসছে। বনরক্ষীদের হাতে দু, চারটি হরিণ পাচারের ঘটনা ধরা পরলেও শিকারীরা আইনের ফাকফোকর দিয়ে খুব সহজেই বেড়িয়ে আসছে বলে জানা গেছে।সুন্দরবন সহ-ব্যাবস্থাপনা কমিটির (সিএমসির) সদস্য ওলিয়ার রহমান বলেন, বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের হরিণ শিকারী চক্র।
বনসংলগ্ন এলাকার লোকজনই হরিণ শিকারের সাথে বেশী জড়িত। তাই এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় হরিণ শিকারা করে থাকে। বনের জীববৈচিত্র রক্ষায় বনরক্ষিদের আরও সচেতন হতে হবে বলেও জানান তিনি।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, ‘বনবিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে সুন্দরবনে এই অপতৎপরতা বেড়ে গেছে। বনবিভাগের আরও কঠোর হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ধরা পড়া হরিণ শিকারীদের জন্য কঠোর আইনও করতে হবে’।বনবিভাগ সূত্র জানান, গত ৫ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ইসহাকের চিলা এলাকা থেকে ২০ কেজি হরিণের মাংসহ একটি ডিঙ্গি নৌকা আটক করা হয়। এসময় চোরা শিকারীরা পালিয়ে যায়। ২৭ জানুয়ারি দুবলার জামতলা ও আলোরকোল থেকে হরিণের মাংস ও ফাঁদসহ পাঁচ হরিণ শিকারীকে আটক করেছে বনরক্ষিরা। আটক নওরেশ, প্রদীপ, রাজিব, ইউনুস ও ইদ্রিস রামপালের শ্রীফলতলা গ্রামের বাসিন্দা। গত ২৫ জানুয়ারি সুন্দরবনের নীলকমল এলাকা থেকে ২০ কেজি হরিনের মাংস ও ২০ রাউন্ড গুলিসহ পাথরঘাটার হিরো আকন নামের এক শিকারীকে আটক করে বনরক্ষীরা।
২৩ জানুয়ারি শরণখোলার খুড়িয়াখালী গ্রামের তানজের আলীর বাড়ি থেকে দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করে শরণখোলা ষ্টেশনের বনরক্ষীরা। ২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সুন্দরবনের কচিখালীর ডিমের চর থেকে ১৫ কেজি হরিণের মাংস, একটি ট্রলারসহ দুই শিকারীকে আটক করে কচিখালীর বনরক্ষীরা। আটক নিজাম ও ইদ্রিসের বাড়ি পাথরঘাটর পদ্মসুলুইজ এলাকায়। এর আগে ১৮ জানুয়ারি দুবলার চরের নারকেলবাড়িয়া থেকে ৫ কেজি হরিণের মাংসসহ দুই জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলে হাজতে প্রেরণ করা হয়।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন কাছে দাবি করেন, হরিণ শিকারীদের ধরতে বনবিভাগের নিয়মিত টহল অব্যাহত আছে। নিয়মিত টহলে কারনে শিকারীরা আটক হচ্ছে। তবে আটক এসব শিকারীদের অপতপরতা ঠেকাতে যে আইন আছে, সেই আইন আরও কঠোর করতে সংস্কারের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।#
সময় জার্নাল/এলআর