বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০২৩
এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট প্রতিনিধি:
জীবন যুদ্ধ সংগ্রামে থেমে নেই প্রতিভাবান উদ্যোগী নারীরা। দমাতে পারেনি অভাব, কু-সংস্কার ও শারীরিক মানুষিক নির্যাতন। সমাজের প্রতিভাবান এ রকম একাধিক উদ্যোক্তাদের পথ প্রদর্শক মোরেলগঞ্জের মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। স্যালুট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে। দিয়েছে কর্মসংস্থানের পথ, সমাজে মাথা উচুঁকরে দাড়াবার আত্মমর্যাদা। প্রতিবছর প্রশিক্ষণ নিয়ে শত শত নারী উদ্যোক্তা বের হয় এ কেন্দ্র থেকে ৩ সহস্রাধিক উদ্যোমী নারী দাড়িয়েছেন নিজের সক্ষমতায় ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ২০০০ সালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে দেশে ৭ টি মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটি গড়ে উঠে। ২০০৫ সালে এর কার্যক্রম শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জের তুলাতলা নামক স্থানে ৫ একর জমির ওপর এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি নির্মিত হয়। এখানে রয়েছে ৪ তলা বিশিষ্ট ২টি ভবন একটিতে প্রশিক্ষণ কাম হোস্টেল ভবন, অন্যটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য আবাসিক কোয়াটার ভবন।
এ কেন্দ্রটিতে ট্রেড সাটিফিকেট ইন বিউটিফিকেশন, ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলরিং ও আধুনিক কম্পিউটার অফিস এ্যাপ্লিকেশন। ৩টি ট্রেডে এ প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ৩ মাস পরপর বছরে ৪টি ব্যাজে ৪ শ’ জন প্রশিক্ষনার্থী। এ খানে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা প্রশিক্ষণ গ্রহন করে দক্ষ ও কারিগর হিসেবে সার্টিফিকেট নিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে হচ্ছেন দৃশ্যমান উদ্যোক্তা। ঘুরছে তাদের সংসারের চাকা। পাশাপাশি অন্যকেও যোগাচ্ছেন কর্মসংস্থানের পথ। দক্ষ প্রশিক্ষক হিসেবে বেশী বেতনেরও সুযোগ পাচ্ছেন বিভিন্ন গার্মেন্স সেক্টরে। এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মূল ভবনের বাহিরেও বাকি জমিতে কৃষি ও মৎস্য চাষ করে বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করে। সে টাকা জমা হচ্ছে সরকারি কোষাগারে।
প্রশিক্ষার্থী স্বাবলম্বী একাধিক নারী উদ্যোক্তারা সংবাদকর্মীদের কাছে তাদের জীবন সংগ্রামের বেধনাদায়ক অনেক স্মৃতির কথা তুলে ধরেন। এ রকম জয়ীতা নারী সাবিয়া আক্তার মিনা ২০১৭ সালে বিউটিফিকেশন (পাল্লার) ও টেইরারিং দুটি প্রশিক্ষণ গ্রহন করে এখন সে একজন সফল জয়ীতা নারী। নিজ উদ্যোগে দৈবজ্ঞহাটী বাজারে মহিলা মার্কেটে মামুনী টেইলার্স নামের একটি সিট কাপড়ের প্রতিষ্ঠান করে পাশাপাশি টেইলার্স মাস্টারেও ৭/৮ জন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
দোকানে ২ জন কর্মচারীরও কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করেছেন। ২০১৯ সালে সফল উদ্যোগী সাবিহা আক্তার অর্থনৈতিকভাবে একজন সাফল্যে অর্জনকারি নারী হিসেবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে রোকেয়া দিবসে শ্রেষ্ট জয়ীতা পুরস্কার প্রাপ্ত হন। ১৮ বছর বয়সে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভালবেসে বিবাহ করে একই গ্রামের প্রতিবেশী রাজু হাওলাদারকে। সে খানে ১৮ বছর সংসার করে সুখ হলোনা তার। ছেলে সন্তান না হওয়ার কারনে শশুর-শাশুড়ির ননদের প্রতিনিয়ত শারিরীক, মানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হতে হয় তাকে। এক পর্যায়ে দ্বিতীয় বিবাহ করে স্বামী। মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে সাবিহা আক্তার আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েও থেমে যান। সেখান থেকে নিকটতম আত্মীয়রও মাধ্যমে যোগাযোগ করেন মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অফিসার ইনচার্জ ড. মোহা. মোখলেছুর রহমান ও মনিরুননাহার আপারও সহযোগতিার কথা ভূলতে পারেনি। তাদের কারনে এখানে এসে দাড়াতে পেরেছেন তিনি আজ। এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি তৈরি হওয়ার কারনে আমাদের মত অসহায়দের মাথা উচু করে আত্ম মর্যাদার ঘুরে দাড়াবার পথ তৈরি করে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ জন্য তাকে জানাই স্যালুট। কু-সংস্কার সমাজের সকল বাঁধা পেরিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যে অর্জনকারি আরও একজন জয়ীতা নারী ২০২১ সালে ২৯ তম ব্যাজে এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ট্রেড সার্টিফিকেট ইন বিউটিফিকেশনে প্রশিক্ষই নিয়ে পাতাবাড়িয়া গ্রামের রহিমা বেগম একজন সফল ব্যবসায়ী। ২ হাজার টাকায় দোকান ভাড়া নিয়ে এক পাসে পাল্লারের কাজ অন্যদিকে ছিট কাপড়ের পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় করে ভাগ্য বদল করেছেন। সকল খরচ মিটিয়ে প্রতিমাসে তিনি আয় করছেন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। কচুয়া উপজেলার খলিশা খালী গ্রামের তানিয়া আফরোজা লাভনী ২০১৮ সালে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তিনি নিজেই এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অতিথি ট্রেইনার। জেলা শহর বাগেরহাটে ১০ হাজার টাকা দোকান ভাড়া নিয়ে ট্রেনিং সেন্টার খুলে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কুকিং এন্ড বেকিং হস্তশিল্প ও হাতের কাজের জন্য ব্যাজ অনুযায়ী একাধিক নারীদের।
শারমীন আক্তার এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ প্রশিক্ষক হিসেবে চাকুরি করছেন মোরেলগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে। এরকম নাজমা আক্তার বিউটিফিকেশনে ২৮ তম ব্যজে প্রশিক্ষণ নিয়ে পিরোজপুর জেলার পাড়েরহাট শহরে নিজ উদ্যোগে পাল্লার প্রতিষ্ঠান করেছেন। অনুরুপ জান্নাতুন ফেরদৌস পুতুল ১৮ তম ব্যজে একই ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে কচুয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে পেয়েছেন চাকুরি। এভাবে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় একাধিক সফল প্রশিক্ষণার্থী উদ্যোক্তারা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ উদ্যোগে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। অন্যদেরকেও দেখিয়েছেন বিকল্প কর্মসংস্থানের পদ।
এ সর্ম্পকে মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অফির্সার ইনচার্জ ড. মোহা. মোখলেছুর রহমান বলেন, মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ২০২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ১০৪ জন প্রশিক্ষণার্থী ৩টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অনেকেই দৃশ্যমান উদ্যোক্তা এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারী ১২ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৪ জন। ৩টি ট্রেডে ৬ জন ট্রেইনার স্থানে রয়েছে মাত্র ১ জন। কম্পিউটার প্রশিক্ষনে ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্য মাত্র ১০টি কম্পিউটার তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ২৫টি ড্রেস মেকিংয়ের মেশিনের মধ্যে ৫/৬টি সচল রয়েছে। বাকিগুলো অকেজো। আধুনিক মেশিনের ব্যবস্থা না হলে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে এর প্রভাব পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন এ কর্মকর্তা।
সময় জার্নাল/এলআর