শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

‘গণপূর্তের’ নিয়োগে তিন প্রতারক সচিবের থাবা

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২৩
‘গণপূর্তের’ নিয়োগে তিন প্রতারক সচিবের থাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক :


আলমগীর হোসেন, রেজাউল হক ও হুমায়ূন কবির।কেউ অতিরিক্ত, কেউ যুগ্ম, কেউ আবার সহকারী সচিব। এসব পদ নিজেদের তৈরি। তারা প্রতারক। এই প্রতারকচক্র ‘গণপূর্তের’ একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে পুঁজি করে চাকরি দেওয়ার নামে তিন শতাধিক প্রার্থীর প্রায় প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ থেকে ১২ লাখ টাকা করে হাতিয় নিয়েছে। সরকারি অফিসের ‘অব্যবহৃত কক্ষে’ বসে চাকরির পরীক্ষা শেষে কিউআর কোডযুক্ত নিয়োগপত্রও তুলে দেন চাকরি প্রত্যাশীদের হাতে। তবে চাকরিতে যোগদান করতে গিয়ে তারা দেখেন সবকিছু ভুয়া। এ চক্রে কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

৩ ভুয়া সচিবসহ ৭ প্রতারককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। এরপর বেরিয়ে আসে তাদের প্রতারণার চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।জানা গেছে, গত বছরের ৬ এপ্রিল গণপূর্ত অধিদপ্তর ১৪ থেকে ১৬ গ্রেডের বিভিন্ন পদে ৪৪৯ জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন তিন ভুয়া সচিব আলমগীর, রেজাউল হক এবং হুমায়ূন কবির। চাকরিপ্রত্যাশী সংগ্রহ করতে তারা কুষ্টিয়া, রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফরিদপুর ও বরিশালে দালাল নিয়োগ করেন। দালালদের মাধ্যমে কারও কাছ থেকে ৫ লাখ, কারও কাছ থেকে ৮ লাখ আবার কারও কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নেন। এরপর বিভিন্ন সরকারি অফিসে অব্যবহৃত কক্ষে বসে তারা চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউও নেন।

পরে ভুয়া নিয়োগপত্র ধরিয়ে দেন চাকরিপ্রত্যাশীদের হাতে। কিউআর কোডযুক্ত নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে কারও অবিশ্বাস জন্মায়নি এই চাকরিদাতাদের প্রতি। কিন্তু যখন যোগদান করতে যান, তখনই তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানানো হয়, এ নিয়োগপত্র সঠিক নয়, ভুয়া। এদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরে একের পর এক লোকজন এমন নিয়োগপত্র নিয়ে আসতে থাকলে বিষয়টি তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে অবগত করে। পরে গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ বিষয়টি তদন্তে নামে। তারা সম্প্রতি এ চক্রের তিন ভুয়া সচিবসহ ৭ জনকে ঢাকা ও রাজবাড়ী থেকে গ্রেফতার করে। চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন-পলাশ চন্দ্র সরকার, মো. আসাদুল হক, জাহিদ হাসান ও আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু।


ডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, চক্রটির সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যাতায়াত থাকায় চাকরিপ্রত্যাশীদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য কখনো কখনো নিয়ে যেতেন সচিবালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন অফিসে। নিজেদের সচিব পরিচয় দিয়ে লোক দেখানো সাক্ষাৎকারেরও ব্যবস্থা করতেন তারা।ডিবি জানায়, চক্রের মূল হোতা আলমগীর হোসেনের বাড়ি নোয়াখালীতে। তিনি স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে তিনি অধ্যাপনা শুরু করেন নোয়াখালীর বিভিন্ন কলেজে। তিনি নিজেকে নোয়াখালী অঞ্চলের আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন। এরপর শুরু হয় তার প্রতারণা। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নানান কারণে যাতায়াত ছিল তার। আর এ সুবাদে ভুক্তভোগীদের কাছে তিনি নিজেকে ‘সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব’ পরিচয় দিতেন।


তার সহযোগী রেজাউল হকও আপাদমস্তক প্রতারক। তিনি রংপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অনার্স মাস্টার্স করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। নিজের নির্দিষ্ট কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও তিনি ঢাকার অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল বাসা নিয়ে থাকেন। নিজের নামের পাশে ড. রেজাউল হক ‘এনডিসি, পিএসসি’ লেখেন। নিজেকে পরিচয় দেন ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইন অনুবিভাগ শাখার অতিরিক্ত সচিব।’ ‘লায়ন ক্লাবের সদস্য’ পরিচয়ে ভিজিটিং কার্ডও বানিয়েছেন।আরেক প্রতারক হুমায়ূন কবিরের বাড়ি ফরিদপুরের রাজবাড়ীতে। তিনি নিজেকে কখনো ‘সহকারী সচিব’ আবার কখনো ‘নির্বাহী প্রকৌশলী’ পরিচয় দিতেন। হুমায়ূন কবির প্রতারণার টাকায় ফরিদপুরের রাজবাড়ীতে ২ মাসের মধ্যে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করেছেন। সেই সঙ্গে ইলেকট্রনিক সামগ্রীর বড় একটা শোরুম দিয়েছেন।


সময় জার্নাল / এসএম



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল